মাদুরাই সমাবেশে সরব থালাপতি বিজয়-
তামিলনাড়ুর রাজনীতিতে উত্তাপ ছড়ালেন দক্ষিণী সুপারস্টার ও তামিলাগা ভেত্রি কাজাগাম (TVK)-এর প্রতিষ্ঠাতা থালাপতি বিজয়। গত ২১ আগস্ট মাদুরাইয়ে আয়োজিত এক মহাসমাবেশে লাখো সমর্থকের সামনে তিনি বিজেপি ও ডিএমকের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধ ঘোষণা করেন।
বিজয় বলেন,“আমাদের একমাত্র আদর্শগত শত্রু বিজেপি, আর রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী ডিএমকে। টিভিকে কোনো মাফিয়া সংগঠন নয়, এটা এমন এক শক্তি, যারা কাউকেই ভয় পায় না। আজ আমরা ফ্যাসিবাদী বিজেপি আর বিষাক্ত ডিএমকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করছি।
বিজেপির বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান-
বিজেপিকে আক্রমণ করে তিনি জানান, তামিলরা কখনোই বিজেপিকে মেনে নেবে না। দলটির প্রতীক ‘পদ্মফুল’কে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, “যেমন পদ্মপাতায় জল স্থায়ী হয় না, তেমনি বিজেপির সঙ্গেও তামিলদের সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী হবে না।” এ বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি বিজেপির তামিলনাড়ু রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তারের প্রচেষ্টাকে একেবারে নাকচ করে দেন।
আবেগঘন বার্তা: ‘সিংহের মতো লড়ব’
ভক্তদের উদ্দেশে বিজয় বলেন, “সিংহ জানে কীভাবে একা থাকতে হয়। সিংহ শুধু শিকারের জন্য বেরোয়, বিনোদনের জন্য নয়। আর সিংহ কখনো মৃত শিকার খায় না।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মন্তব্য করেছেন, এই বার্তায় বিজয় তার দৃঢ়তা ও স্বাধীন কৌশল স্পষ্ট করে দিয়েছেন—তিনি কোনো আপসকামী রাজনীতিতে বিশ্বাসী নন।
NEET পরীক্ষার বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা-
সমাবেশে NEET (ন্যাশনাল এলিজিবিলিটি কাম এন্ট্রান্স টেস্ট) বাতিলের দাবি তুলেন বিজয়। সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উদ্দেশে তিনি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে বলেন, “NEET বাতিল করুন! পারবেন কি মোদি? আপনার একগুঁয়েমির কারণে আমাদের ছাত্রছাত্রীরা ভুগছে।”
তামিলনাড়ুতে দীর্ঘদিন ধরেই NEET-এর বিরুদ্ধে আন্দোলন চলছে। এই নীতিকে ছাত্রদের জন্য বৈষম্যমূলক হিসেবে দেখছেন স্থানীয় রাজনৈতিক দলগুলো। বিজয়ের অবস্থান সেই বিরোধিতাকেই আরও জোরালো করল।
তৃতীয় শক্তি গড়ার সংকল্প-
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিজয় ডিএমকে ও এআইএডিএমকের বাইরে তামিল রাজনীতিতে একটি তৃতীয় শক্তি গড়ে তুলতে চাইছেন। অনেকেই তার মাদুরাই সমাবেশকে দলের সবচেয়ে বড় শক্তি-প্রদর্শন হিসেবে দেখছেন।
বিজয় ঘোষণা দেন, “২০২৬ হবে তামিল রাজনীতির জন্য এক যুগান্তকারী বছর। যেমন- ১৯৬৭ আর ১৯৭৭ ছিল পরিবর্তনের বছর, তেমনই ২০২৬-এ নতুন রাজনৈতিক জাদু ঘটবে, নতুন শক্তির উত্থান হবে।”
রুপালি পর্দা থেকে রাজনীতির ময়দানে-
জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা অবস্থায় ২০২৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনীতিতে নাম লেখান থালাপতি বিজয়। অভিনেতা থেকে রাজনৈতিক নেতায় তার যাত্রা তামিলনাড়ুর ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
তামিলনাড়ুর রাজনীতিতে আগে যেমন এম.জি.আর. এবং জয়ললিতার মতো অভিনেতারা সফলভাবে নেতৃত্ব দিয়েছেন, বিজয়ের উত্থানকেও অনেকেই সেই ধারার পরবর্তী অধ্যায় হিসেবে দেখছেন।
সামনে কী অপেক্ষা করছে?
২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে বিজয়ের এই শক্তিশালী বার্তা নিঃসন্দেহে রাজনীতির মঞ্চে নতুন সমীকরণ তৈরি করেছে। তার বিজেপি-বিরোধী অবস্থান, ডিএমকের প্রতি চ্যালেঞ্জ, এবং NEET-বিরোধী কণ্ঠস্বর তাকে তরুণ প্রজন্মের কাছে আরও গ্রহণযোগ্য করে তুলতে পারে।
এখন প্রশ্ন হলো—জনপ্রিয়তা কি রাজনৈতিক বাস্তবতায় রূপ নেবে? বিজয়ের এই ঘোষণা নিঃসন্দেহে তামিল রাজনীতির প্রচলিত দুই-শক্তির সমীকরণকে নাড়িয়ে দিয়েছে।
Leave a comment