পাকিস্তানে ৫ দশমিক ২ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। মঙ্গলবার সকালে সংঘটিত এই ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল আফগানিস্তানের হিন্দুকুশ পর্বতমালা। স্থানীয় সময় সকাল ১০টা ২০ মিনিটের দিকে ভূগর্ভের ১৯০ কিলোমিটার গভীরে এর কেন্দ্রস্থল শনাক্ত করা হয়।
পাকিস্তান আবহাওয়া বিভাগের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, রাজধানী ইসলামাবাদ, রাওয়ালপিন্ডি, খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের পেশোয়ার, সোয়াত ও অ্যাবোটাবাদসহ বিভিন্ন জেলায় ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো প্রাণহানি বা বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সকালবেলার ব্যস্ত সময়ে হঠাৎ কম্পন অনুভূত হলে অনেকে দৌড়ে ঘর-বাড়ি ও অফিস থেকে বের হয়ে আসেন। কিছু এলাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও দপ্তরে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। ইসলামাবাদের এক সরকারি কর্মচারী স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “হঠাৎ চেয়ারে বসা অবস্থায় টলটলায় অনুভব করলাম। সবাই দ্রুত বের হয়ে যায়। কয়েক সেকেন্ডের জন্য আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।”
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও কয়েকজন ভূমিকম্পের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন। তবে সরকারি সংস্থাগুলো এখনো ক্ষয়ক্ষতির কোনো আনুষ্ঠানিক রিপোর্ট প্রকাশ করেনি।
আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী হিন্দুকুশ পর্বতমালা ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা হিসেবে পরিচিত। ভারতীয় ও ইউরেশীয় টেকটোনিক প্লেটের সংঘর্ষ এই অঞ্চলে প্রায়ই ভূমিকম্প সৃষ্টি করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, যদিও ৫.২ মাত্রার ভূমিকম্পকে মাঝারি ধরা হয়, তবে গভীর কেন্দ্রস্থলের কারণে এর প্রভাব তুলনামূলকভাবে কম ছিল।
ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, এই অঞ্চলে মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প প্রায়ই ঘটে থাকে এবং বড় কোনো ভূমিকম্পের ঝুঁকি পুরোপুরি উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তাই ভবন ও অবকাঠামো নির্মাণে ভূমিকম্প সহনশীল নকশার প্রয়োজনীয়তা আরও একবার সামনে আসলো।
পাকিস্তান আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল হিন্দুকুশ হওয়ায় কম্পনের মাত্রা সীমিত ছিল। জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (NDMA) জানিয়েছে, মাঠপর্যায়ে কর্মকর্তাদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে যাতে কোনো ধরনের ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটলে দ্রুত উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করা যায়।
সরকারি এক মুখপাত্র বলেন, “আমরা জনগণকে আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। ভূমিকম্পের কোনো তাৎক্ষণিক ক্ষয়ক্ষতির খবর নেই। তবে সব ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে।”
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান সীমান্তবর্তী এই অঞ্চলে ঘন ঘন ভূমিকম্প দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর জন্যও সতর্কবার্তা। বাংলাদেশ, ভারত, নেপালসহ প্রতিবেশী দেশগুলোও ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়ানো জরুরি।
Leave a comment