পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীতে এক দম্পতির ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধারকে কেন্দ্র করে এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে। মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) সকাল ৯টার দিকে চালিতাবুনিয়া ইউনিয়নের উত্তর চালিতাবুনিয়া গ্রাম থেকে রাকিব প্যাদা (৩০) ও তার স্ত্রী সোহাগী বেগমের (২৫) মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। দম্পতির মৃত্যুর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি চিরকুট উদ্ধার করা হয়েছে, যেখানে ‘মানসম্মান সব গেছে, বাঁচ্ছা থাইকা কি হবে’—এই বাক্য নিয়ে রহস্য আরও জটিল আকার ধারণ করেছে।
পুলিশ ও স্থানীয়দের দাবি, ঘটনাটি আত্মহত্যা হলেও এর পেছনে বিস্তর রহস্য রয়েছে। চিরকুটে উল্লেখিত কথাগুলো পরিবারিক কলহ, মানসিক চাপ বা নানান সামাজিক সংকটের ইঙ্গিত বহন করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে মৃত্যুর সঠিক কারণ এখনও নিশ্চিত নয়।
স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঘটনাটি ঘটেছে । তবে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায় পরদিন সকাল ৯টার দিকে। প্রতিবেশী এক আত্মীয় দম্পতির ঘরে ঢুকে প্রথমে তাদের ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান। তিনি চিৎকার করলে পরিবারের সদস্য ও প্রতিবেশীরা গিয়ে মরদেহ নিচে নামিয়ে রাখেন।
চালিতাবুনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম পুলিশ দফাদার মোশাররফ হোসেন বলেন, “দুজনের গলায় ফাঁসের দাগ ছিল। আমরা পৌঁছানোর আগেই স্থানীয়রা তাদের নামিয়ে ফেলেছিল। শুনেছি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বেশ কিছুদিন ধরে ঝামেলা চলছিল।নিহত দম্পতির ৭ বছর বয়সী একটি সন্তান রয়েছে।”
ঘর থেকে উদ্ধার করা ডায়েরির দুটি পাতায় স্বামী-স্ত্রীর স্বাক্ষরিত একটি চিরকুট পাওয়া গেছে। এতে রয়েছে একাধিক বাক্য, যা দম্পতির মানসিক অবস্থা ও সিদ্ধান্ত সম্পর্কে ধারণা দিচ্ছে। চিরকুটে লেখা ছিল— “মানসম্মান সব গেছে। বাঁচা থাইকা কি হবে। নিজের জীবন নিজে দিছি। সোহাগীরও ইচ্ছা মৃত্যু বরণ করবো।”
এছাড়া আরও লেখা ছিল—“আমাদের লাশ যেন পোস্টমর্টেম না করে। আমাদের কবর যেন ঘরের পশ্চিম পাশে একসাথে হয়। আমাদের পোলার দিকে খেয়াল রাখবেন সবাই। আমার পোলা মা-বাবা ছাড়া এতিম। আমাদের দু’জনকে সবাই মাফ করে দিয়েন। বার বছর বিয়ে হয়েছে। এরকম খারাপ এখন কেন।’”
চিরকুটের এই লাইনগুলো দম্পতির সামাজিক মানসিক চাপ, আত্মসম্মান হারানোর বেদনাবোধ ও আত্মহত্যার ইঙ্গিত বহন করছে বলে ধারণা করছে পুলিশ। তবে এটি কোনো পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড কি না—তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে স্থানীয়দের মাঝে। ঘটনার পর এলাকায় ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বহুদিন ধরেই পারিবারিক কলহ চলছিল। কিছুদিন আগেও তাদের মধ্যে বড় ঝামেলা হয়েছিল বলে জানান প্রতিবেশীরা।
রাঙ্গাবালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শামীম হাওলাদার বলেন, “ঘটনাস্থল থেকে চিরকুটসহ সব আলামত আমরা জব্দ করেছি। মরদেহ দুটি সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য পটুয়াখালী মর্গে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট পেলেই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।”
তিনি আরও বলেন,“চিরকুটে কিছু বক্তব্য পাওয়া গেছে, যা তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আত্মহত্যা বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হলেও হত্যার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না।”
Leave a comment