অনিরাপদ ইমেইল বার্তায় নয়াদিল্লির বিভিন্ন স্কুল ও কয়েকটি বিমানবন্দরে বোমা হামলার হুমকি প্রদান করা হয়েছে। রোববার সকালে (স্থানীয় সময় ভোর ৬:০৮) ‘টেরোরাইজার্স ১১১’ নামে দাবি করা এক গোষ্ঠী প্রায় ৩০০টি স্কুলের ইমেইলে একই ধরনের হুমকি পাঠায় — স্থানীয় সংবাদমাধ্যম এ খবর দিয়েছে। হুমকিতে বলা হয়েছিল যে, ওই স্কুলগুলোর ভবনে বোমা স্থাপন করা আছে এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কোনো পদক্ষেপ নিলে তারা রক্তস্রোত দেখাবে বলে সতর্ক করা হয়েছে। হুমকিদাতার ইমেইলে নিজেকে ‘সন্ত্রাসী গ্রুপ টেরোরাইজার্স ১১১-এর শীর্ষ নেতা’ হিসেবে পরিচয় দেয়া হয়।
ইমেইলে থাকা ভয়ভীতিকর বাক্যগুলো পুলিশি তৎপরতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বার্তায় আরও বলা হয়—“আপনারা কোনো পদক্ষেপ না নিলে রক্তক্ষয় দেখার জন্য তৈরি থাকুন।” হুমকিদাতা নিজের সম্পর্কে বলেন, “আমি মন্দের সন্তান, আমি ঘৃণার অর্থ।”
ইমেইল পাওয়ার কয়েক মুহূর্তের মধ্যে দিল্লি পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিট স্কুলগুলোতে পৌঁছে যায়। খবর/রিপোর্ট অনুযায়ী পুরো ৩০০-রও বেশি স্কুলে সার্জিক্যাল তল্লাশি চালানো হয়। তল্লাশীর পর এখনও পর্যন্ত কোনো সন্দেহজনক বা বিস্ফোরক বস্তু শনাক্ত করা হয়নি। তবে নিরাপত্তা ঝুঁকি রোধে সংশ্লিষ্ট স্কুলগুলোর গ্রাউন্ড, ভবন ও আশপাশে সুনির্দিষ্ট খোঁজ চলেছে।
প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, হুমকির তালিকায় দিল্লির দ্বারকা অঞ্চলের সিআরপিএফ পাবলিক স্কুল ও কুতুব মিনার এলাকায় অবস্থিত সর্বোদয় বিদ্যালয়ের মত বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও রয়েছে। একই সঙ্গে কিছু বিমানবন্দরের নাম উল্লেখ থাকায় বিমানবন্দরগুলোরও নিরাপত্তা স্ক্রিনিং বাড়ানো হয়েছে।
শহরের বিভিন্ন স্কুলে সদ্যই ইমেইল-ভিত্তিক বোমা হুমকির ঘটনা লক্ষণীয়ভাবে বাড়ছে। মাত্র এক সপ্তাহ আগে দিল্লির কয়েকটি নামকরা স্কুল—যেমন ডিপিএস দ্বারকা ও কৃষ্ণা মডেল পাবলিক স্কুল—এমন ইমেইল পেয়েছে; সেবারও কোনো বিস্ফোরক বস্তু পাওয়া যায়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের ইমেইল কেবল অস্থিরতা বা আতঙ্ক ছড়াতে ব্যবহৃত হতে পারে; অন্যদিকে, প্রশাসনকে প্রতিটি হুমকিকে গুরুত্ব সহকারে নেওয়া ছাড়া উপায় নেই।
দিল্লি পুলিশ সূত্রে বলা হয়েছে, মুহূর্তিক প্রতিক্রিয়ার অংশ হিসেবে সকল সম্ভাব্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে এবং তদন্ত শুরু হয়েছে। ইমেইলের উৎস নির্ণয়, সার্ভার-আইপি ট্রেস করা, এবং ‘টেরোরাইজার্স ১১১’ নামক ওই গোষ্ঠী বা নেটওয়ার্কের পটভূমি যাচাই ইত্যাদি তদন্ত হচ্ছে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ও অভিভাবকদের সতর্ক করে বলা হয়েছে — কোনো অচেনা প্যাকেজ বা সন্দেহজনক ব্যক্তি দেখলে অবিলম্বে পুলিশকে জানাতে। একই সঙ্গে পাঠ্যক্রম ও ক্লাস কার্যক্রমে অনুপস্থিতির ক্ষেত্রে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিলেও অধিকাংশ স্কুল দ্রুত নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করে ক্লাস পরিচালনা চালিয়ে দিয়েছে বা প্রয়োজনে সাময়িক বন্ধ করেছে।
ইমেইল-ভিত্তিক হুমকি মোকাবিলায় কেবল মাঠের ফোর্সই যথেষ্ট নয়; তাৎক্ষণিক সাইবার ফরেনসিক্স, আইটি ট্রেসিং ও আন্তর্জাতিক ইমেল সার্ভার সহযোগিতাও অত্যন্ত জরুরি। পাশাপাশি স্কুল-পরিবেশে জরুরি এভাকুয়েশন পদ্ধতি, রিয়েল-টাইম যোগাযোগ চ্যানেল ও অভিভাবকদের সঙ্গে সমন্বয়, নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরও শক্ত করবে। প্রশাসনকে অনলাইন হুমকির উৎস নির্ধারণে দ্রুততা ও স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে ।
Leave a comment