ভারতের রাজধানী দিল্লির ঐতিহাসিক লালকেল্লা এলাকায় গাড়ি বিস্ফোরণের ঘটনায় বাংলাদেশের নাম জড়ানোর অভিযোগকে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও অগ্রহণযোগ্য বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। তিনি বলেন, “সুযোগ পেলেই ভারতীয় কিছু গণমাধ্যম বাংলাদেশের ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করে, যা বাস্তবতার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক রাখে না।”
মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) সন্ধ্যায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
তৌহিদ হোসেন স্পষ্টভাবে বলেন,“লালকেল্লায় ঘটে যাওয়া বিস্ফোরণ একটি দুঃখজনক ঘটনা। কিন্তু এর সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। ভারতীয় গণমাধ্যমের এমন সংবাদ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, অযৌক্তিক এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন।”
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ একটি দায়িত্বশীল রাষ্ট্র, যা সন্ত্রাসবাদ ও উগ্রবাদের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণ করে আসছে। আমরা সবসময় শান্তি, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা এবং সহযোগিতার পক্ষে। বাংলাদেশ কখনোই অন্য কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ ঘটনায় হস্তক্ষেপ করে না ।
তৌহিদ হোসেন ভারতীয় কিছু গণমাধ্যমের আচরণের সমালোচনা করে বলেন,“দুঃখজনকভাবে দেখা যায়, সুযোগ পেলেই তারা বাংলাদেশের নাম টেনে আনে। অথচ তদন্ত শেষ হওয়ার আগেই এমন অভিযোগ তুলে সংবাদ প্রচার করা দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার পরিচয় নয়।”
তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন , দিল্লির ঘটনার তদন্তে সত্য উদঘাটিত হলে এই ভ্রান্ত তথ্যের অবসান ঘটবে। সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে চীন থেকে অস্ত্র কেনার বিষয়ে তৌহিদ হোসেন বলেন,“বাংলাদেশ কোনো এক দেশের দিকে ঝুঁকে নেই। আমরা ভারসাম্যপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি মেনে চলি। চীন, ভারত, যুক্তরাষ্ট্রসহ সবার সঙ্গেই আমাদের সুসম্পর্ক রয়েছে। জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা করেই আমরা সিদ্ধান্ত নেই।”
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলার রায় প্রসঙ্গেও মন্তব্য করেন। তিনি বলেন,“শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলার রায়ের বিষয়ে যে কেউ জাতিসংঘে আপিল করতে পারে। এ নিয়ে জাতিসংঘ যদি কিছু বলে, আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক আইন ও কূটনৈতিক প্রোটোকল মেনে চলবে।”
প্রসঙ্গত, সোমবার (১০ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ভারতের দিল্লির ঐতিহাসিক লালকেল্লার সামনে একটি গাড়ি বিস্ফোরণে কমপক্ষে ১৩ জনের মৃত্যু হয় এবং বহু মানুষ আহত হন। প্রাথমিকভাবে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ একে ‘সন্ত্রাসী হামলা’ বলে অভিহিত করলেও এখনো কোনো সংগঠন এই হামলার দায় স্বীকার করেনি। তবে ঘটনার পরপরই ভারতীয় কিছু গণমাধ্যম বাংলাদেশকে এ হামলার সঙ্গে জড়িয়ে সংবাদ প্রচার শুরু করে, যা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের বক্তব্যে পরিষ্কারভাবে জানানো হয়েছে, দিল্লির লালকেল্লা বিস্ফোরণের ঘটনায় বাংলাদেশের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তিনি ভারতীয় গণমাধ্যমকে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে সংবাদ প্রচারের আহ্বান জানিয়ে বলেন,“ভ্রান্ত তথ্য প্রচার দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের জন্য কোনোভাবেই ইতিবাচক নয়।”
Leave a comment