জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে শর্ত সাপেক্ষে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে মানবিক করিডর স্থাপন নিয়ে সরকারের পদক্ষেপে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে রাজনৈতিক জোট গণতন্ত্র মঞ্চ। তারা বলেছে, এই ধরনের উদ্যোগের সঙ্গে দেশের জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা সরাসরি জড়িত এবং এমন স্পর্শকাতর বিষয়ে কোনো একক সিদ্ধান্ত নয়, বরং সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ঐকমত্যে পৌঁছে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।
শনিবার এক যৌথ বিবৃতিতে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা এই বক্তব্য দেন। বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, ভাসানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু (মঞ্চের সমন্বয়ক), রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ূম এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন।
বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই রোহিঙ্গা সংকটে নানামুখী চাপের মধ্যে রয়েছে। প্রায় ১৫ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী আশ্রয় নেওয়ার ফলে দেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে গুরুতর প্রভাব পড়েছে। এই প্রেক্ষাপটে নতুন করে মানবিক করিডরের নামে আরও শরণার্থীর আগমন দেশের ওপর অতিরিক্ত বোঝা তৈরি করতে পারে বলে তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, মিয়ানমার সরকার প্রথম পর্যায়ে ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে ফেরত নিতে সম্মত হয়েছে। অথচ সাম্প্রতিক সময়েই আরও ১ লাখ ১৩ হাজার রোহিঙ্গার নতুন করে বাংলাদেশে প্রবেশের গুজব ছড়িয়েছে। এতে করে সংকট আরও ঘনীভূত হতে পারে। গণতন্ত্র মঞ্চ বলছে, জনগণের জানার অধিকার এবং রাজনৈতিক সহমতের গুরুত্ব এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি।
তারা আরও বলেন, বিগত স্বৈরশাসনের সময় একক সিদ্ধান্তে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়ার সিদ্ধান্ত আজও জাতীয় সমস্যায় রূপ নিয়েছে। তাই এখন যখন মানবিক করিডর বা সীমান্তে আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপের মতো গম্ভীর ইস্যু সামনে এসেছে, তখন অন্তর্বর্তী সরকারকেও উচিত হবে একক সিদ্ধান্ত না নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তোলা।
গণতন্ত্র মঞ্চ মনে করে, গত বছরের ৫ আগস্ট যে নতুন রাজনৈতিক সূচনা হয়েছিল, সেটির অন্যতম ভিত্তি ছিল জবাবদিহি ও গণতন্ত্র। সে মূল্যবোধের প্রতিফলন ঘটাতে হলে সরকারকে অবশ্যই সকল দলের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তারা আশা করে, দেশের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা প্রশ্নে কোনো তড়িঘড়ি বা চাপের মুখে নয়, বরং চিন্তাশীল ও সর্বসম্মত সিদ্ধান্তই গ্রহণ করা হবে।
Leave a comment