Home জাতীয় জাতিসংঘ ব্যয় কমানোয় হুমকিতে রোহিঙ্গা সহায়তা কার্যক্রম
জাতীয়

জাতিসংঘ ব্যয় কমানোয় হুমকিতে রোহিঙ্গা সহায়তা কার্যক্রম

Share
Share

জাতিসংঘের কাঠামোগত সংস্কার ও ব্যয় হ্রাসের উদ্যোগের ফলে বাংলাদেশে মানবিক সহায়তা কার্যক্রম এখন কঠিন সংকটে পড়েছে। বিশেষ করে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবিরে বসবাসকারী ১০ লাখেরও বেশি মানুষের খাদ্য, পুষ্টি ও চিকিৎসাসেবা এখন হুমকির মুখে।

‘ইউএন ২.০’ ও ‘ইউএন ৮০’ নামে জাতিসংঘের আধুনিকায়ন কর্মসূচির লক্ষ্য থাকলেও বাস্তবে এর প্রভাব পড়েছে ফান্ডিংয়ে। চাঁদাদাতা দেশগুলোর আর্থিক অনীহা ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক চাপের কারণে জাতিসংঘ গত সাত বছর ধরেই অর্থসংকটে ভুগছে। এ অবস্থায় জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গত মার্চে জানান, ম্যান্ডেট বাস্তবায়ন ও কাঠামোগত সংস্কার নিয়ে ‘ভবিষ্যতের জন্য অঙ্গীকার’ শীর্ষক উদ্যোগের আওতায় কার্যক্রম পুনর্গঠন ও ব্যয় হ্রাস চলছে।

এরই মধ্যে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) বাংলাদেশে তাদের জরুরি খাদ্য সহায়তার বাজেট ঘাটতির বিষয়ে সতর্কতা জারি করেছে। এক মিলিয়নের বেশি রোহিঙ্গার জন্য খাদ্যসহায়তা টিকিয়ে রাখতে এপ্রিলে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজন ১ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার এবং বছরের শেষ পর্যন্ত প্রয়োজন ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার। অন্যথায় মাসিক রেশন অর্ধেকে নামিয়ে আনতে হবে—প্রতি ব্যক্তির জন্য যা দাঁড়াবে মাত্র ৬ মার্কিন ডলার।

ডব্লিউএফপির কান্ট্রি ডিরেক্টর ডমেনিকো স্কালপেল্লি জানান, রোহিঙ্গারা মানবিক সহায়তার ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল। খাদ্য সহায়তা কমে গেলে তারা চরম খাদ্যসংকটে পড়বে এবং বেঁচে থাকার জন্য চরম পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবে।

পুষ্টি ও স্বাস্থ্য খাতে সংকট আরও গভীর। ইউনিসেফ জানিয়েছে, ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে শিবিরগুলোতে অতি তীব্র অপুষ্টিতে আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসার সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় ২৭ শতাংশ বেড়েছে এবং এ বছর তা ১৪ হাজার ২০০ ছাড়িয়ে যেতে পারে। অথচ এই জীবনরক্ষাকারী সেবাগুলোর জন্য বরাদ্দ কমছে। ইউনিসেফের বাংলাদেশ পরিচালক রানা ফ্লাওয়ার্স জানান, সহায়তা কমে যাওয়ার কারণে রোহিঙ্গা পরিবারগুলো আতঙ্কে আছে। তারা প্রশ্ন করছে, যদি পুষ্টি চিকিৎসাও বন্ধ হয়ে যায়, তবে তারা কোথায় যাবে?

শুধু পুষ্টি নয়, জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর-এর তথ্য মতে, স্বাস্থ্যসেবার জন্য তহবিল বন্ধ হওয়ায় ৪০ হাজার গর্ভবতী নারী গর্ভকালীন সেবা হারানোর ঝুঁকিতে আছেন, ১৯ হাজার অপুষ্ট শিশুর চিকিৎসা বন্ধ হয়ে যেতে পারে এবং ১০ হাজার গুরুতর অসুস্থ রোগী আর চিকিৎসা পাবেন না। হেপাটাইটিস সি আক্রান্ত আরও ১০ হাজার শরণার্থী চিকিৎসাবঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কায়।

বাংলাদেশ সরকারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে রোহিঙ্গাদের জন্য জীবনরক্ষাকারী এই কর্মসূচিগুলোর অর্থায়ন নিশ্চিত হয়।

এই প্রেক্ষাপটে স্পষ্ট, জাতিসংঘের কাঠামোগত সংস্কার ও ব্যয় সংকোচনের প্রয়োজনীয়তা থাকলেও মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে, যা মানুষের জীবন ও ভবিষ্যৎকে বিপন্ন করে তুলছে। রোহিঙ্গা সংকট আন্তর্জাতিক মনোযোগ হারালে এর ভয়াবহতা কেবল একটি জনগোষ্ঠীর জন্য নয়, বিশ্ব মানবতার জন্যই হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।

 

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Don't Miss

আজ বিশ্ব স্ট্রোক দিবস

স্ট্রোকের ঝুঁকি ও প্রাথমিক চিকিৎসা বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়াতে আজ বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে স্ট্রোক দিবস। প্রতি বছর ২৯ অক্টোবর পালিত হয় বিশ্ব স্ট্রোক দিবস,...

প্রশান্ত মহাসাগরে মার্কিন হামলা, ১৪ সন্দেহভাজন মাদক পাচারকারী নিহত

প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্বাঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক বিমান ও নৌ-হামলায় অন্তত ১৪ জন সন্দেহভাজন মাদক পাচারকারী নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট...

Related Articles

জাতীয় নির্বাচনের পর এবারের বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে: ধর্ম উপদেষ্টা

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরেই অনুষ্ঠিত হবে এবারের বিশ্ব ইজতেমা। নির্বাচনী প্রস্তুতি...

কিশোরগঞ্জে গর্তের পানিতে ডুবে দুই বছরের শিশুর মৃত্যু

কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর পৌরশহরের বড়খারচর মহল্লায় বাড়ির পাশের একটি গর্তের ময়লা পানিতে পড়ে...

আশুগঞ্জে ১৩০ কেজি গাঁজাসহ আটক ২

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলা থেকে ১৩০ কেজি গাঁজাসহ দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শনিবার...

বিমানযাত্রীর পাকস্থলীতে মিলল ৬৩৭৮ পিস ইয়াবা

রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে এক যাত্রীর পাকস্থলীত থেকে বিপুল পরিমাণ...