বাংলাদেশে তরুণদের কর্মসংস্থান পরিস্থিতি ক্রমেই উদ্বেগজনক হয়ে উঠছে। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া আন্দোলনের বর্ষপূর্তির প্রেক্ষাপটে নতুন করে আলোচনায় এসেছে যুব সমাজের কর্মসংস্থান সংকট। নানা তথ্য-প্রমাণ বলছে, কর্মসংস্থানের অভাবের পাশাপাশি শোভন কর্মক্ষেত্রের অপ্রতুলতার কারণে দেশের বিশাল যুব জনগোষ্ঠী—যাদের সংখ্যা প্রায় সাড়ে চার কোটি—অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে, যেখানে তাদের দক্ষতা, কর্মস্পৃহা ও উদ্ভাবনী ক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে যুব বেকারত্বের হার ৭ দশমিক ২ শতাংশ, যা জাতীয় গড়ের দ্বিগুণেরও বেশি। দেশে প্রায় দুই কোটি তরুণ বেকার, যাদের বড় অংশ শহরমুখী। শিক্ষিত তরুণ-তরুণীদের বেকারত্ব আরও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। প্রতিবছর প্রায় ৯ লাখ শিক্ষার্থী স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে শ্রমবাজারে প্রবেশ করলেও অনেকে চাকরি খুঁজে পান না। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ভুক্ত কলেজ থেকে পাশ করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাত্র ২১ শতাংশ দ্রুত চাকরি পান, বাকি অধিকাংশ দীর্ঘ সময় বেকার থাকেন।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অর্জিত দক্ষতা ও শ্রমবাজারের চাহিদার মধ্যে বড় ধরনের অমিলই এ সংকটের অন্যতম কারণ। বিশেষ করে মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের জন্য চাকরির সুযোগ সীমিত। এদিকে নারী তরুণদের বেকারত্বের হার পুরুষদের তুলনায় বেশি।
প্রযুক্তি, অটোমেশন ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কারণে বিশ্বব্যাপী কর্মসংস্থানের ধরন দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের মতে, ২০২৫ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে ডিজিটাল দক্ষতায় ১৭ কোটি নতুন চাকরি তৈরি হবে, কিন্তু হারিয়ে যাবে ৯ কোটিরও বেশি ঐতিহ্যগত কাজ। বাংলাদেশে সোলার টেকনিশিয়ান, ডিজিটাল মার্কেটার, কনটেন্ট নির্মাতা বা ডেটা অ্যানালিস্টের মতো নতুন খাতে সম্ভাবনা তৈরি হলেও সঠিক দক্ষতা অর্জনের সুযোগ সীমিত।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, তরুণদের কর্মসংস্থানের জন্য স্বল্পমেয়াদি সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি, মধ্যমেয়াদি শিক্ষা ও শিল্পখাতের সংযোগ এবং দীর্ঘমেয়াদি দক্ষতা উন্নয়ন নীতির বাস্তবায়ন জরুরি। নইলে প্রত্যাশিত যুব জনমিতির সুফল ব্যর্থতায় পরিণত হবে।
Leave a comment