ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলায় চাঁদা না দেওয়াকে কেন্দ্র করে এক চিকিৎসকের ওপর সন্ত্রাসী হামলার অভিযোগে ছাত্রদলের পাঁচ নেতার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে গত ১১ মে সন্ধ্যায়, মধুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সংলগ্ন একতা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। আক্রান্ত চিকিৎসক ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. ইমতিয়াজ হোসেন অর্ক।
ডা. অর্ক অভিযোগ করেন, দীর্ঘদিন ধরে মধুখালী উপজেলার বিভিন্ন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে একটি চক্র নিয়মিত চাঁদা আদায় করে আসছে। ওই চক্রের সদস্যরা চিকিৎসকদের নিম্নমানের ওষুধ প্রেসক্রাইব করতেও চাপ প্রয়োগ করে। তিনি এই চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে অবস্থান নেন এবং নির্ধারিত ক্লিনিকে না বসার সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন। এরপরই পরিকল্পিতভাবে তার ওপর হামলা চালানো হয়।
আহত অবস্থায় তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঘটনার ছয় দিন পর, ১৭ মে আদালতে অভিযোগ দায়ের করেন ডা. অর্ক। আদালত অভিযোগটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করার নির্দেশ দিলে, মধুখালী থানা তা গ্রহণ করে।
মামলায় নাম উল্লেখ করা আসামিরা হলেন—মধুখালী পৌর ছাত্রদলের আহ্বায়ক রজব ইসলাম রনি, উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মিকাইল বিশ্বাস, রিয়ান রহমান নয়ন, সদস্য টুটুল বিশ্বাস ও কর্মী নাহিদুর রহমান অপু। অভিযোগে বলা হয়েছে, অপু নেতৃত্বে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ডা. অর্কের ওপর অতর্কিত হামলা চালানো হয়। হামলায় ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক তানভীর রহমান শুভও আহত হন।
ডা. অর্ক জানান, অভিযুক্তরা তার চেম্বারে গিয়ে মাসিক ভিত্তিতে চাঁদা দাবি করেছিল। তিনি স্থানীয় বাসিন্দা হিসেবে এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান, যা তাদের রোষানলের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। হামলার সময় স্থানীয়রা এগিয়ে এসে তাকে রক্ষা করেন।
ঘটনার পর এলাকায় ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে, অন্যথায় আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
ছাত্রদলের ফরিদপুর জেলা সাধারণ সম্পাদক তানজিমুল হাসান কায়েস জানান, ঘটনাটি রাজনৈতিক প্রতিহিংসা এবং দলীয় অন্তঃকোন্দলের ফল। তার দাবি, মামলায় জড়িতদের মধ্যে অনেকে মূলত ঘটনা মীমাংসায় ভূমিকা রেখেছিলেন, কিন্তু পরে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাদের নাম যুক্ত করা হয়েছে।
অন্যদিকে, অভিযুক্ত ছাত্রদল নেতা মিকাইল বিশ্বাস তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকলেও হামলায় সম্পৃক্ত নন এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন।
মধুখালী থানার ওসি এস এম নুরুজ্জামান জানান, মামলাটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্তাধীন এবং আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এই ঘটনায় মধুখালীর সাধারণ মানুষ, সুশীল সমাজ এবং চিকিৎসক মহলে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। রাজনৈতিক পরিচয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের পুনরাবৃত্তি রোধে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি উঠেছে সব মহল থেকে।
Leave a comment