দীর্ঘ তিন দশকেরও বেশি সময় পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এখন উৎসবমুখর পরিবেশে সরব। শিক্ষার্থীদের মাঝে নতুন নেতৃত্ব বেছে নেওয়ার আগ্রহ এবং উত্তেজনা চোখে পড়ার মতো।
মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষ দিনে ২৬টি চাকসু পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য ৪২৯ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এর বাইরে ১৪টি হল সংসদ ও হোস্টেলের ২০৬টি পদে ৫০১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। সব মিলিয়ে ৯৩০ জন প্রার্থী আনুষ্ঠানিকভাবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
নির্বাচনী বিধান অনুযায়ী, মনোনয়ন যাচাই-বাছাই শেষে প্রাথমিক প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ হবে ২২ সেপ্টেম্বর। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৩ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত। চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হবে ২৫ সেপ্টেম্বর। ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১২ অক্টোবর সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ২৭ হাজার ৬৩৪ জন।
১১টি প্যানেলের ঘোষণা-
এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক জোটগুলো থেকে মোট ১১টি প্যানেল ঘোষণা করা হয়েছে। এসব প্যানেল, সংগঠন বা জোট থেকে শীর্ষ তিন পদসহ প্যানেলে কারা আছেন এই তথ্য এখন শিক্ষার্থীদের মধ্যে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।
১.জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল প্যানেল – ভিপি সাজ্জাদ হোসেন হৃদয়, জিএস মো. শাফায়াত, এজিএস আইয়ুবুর রহমান তৌফিক।
২.ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট’ – ভিপি ইব্রাহিম হোসেন রনি, জিএস সাঈদ বিন হাবিব, এজিএস সাজ্জাদ হোসাইন মুন্না।
৩.ইসলামী ছাত্র আন্দোলন সমর্থিত ‘সচেতন শিক্ষার্থী সংসদ’ – ভিপি রবিন, জিএস আব্দুর রহমান, এজিএস আমিনুল ইসলাম রাকিব।
৪.‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন’ – ভিপি মাহফুজুর রহমান, জিএস আর এম রশীদুল হক দিনার, এজিএস জান্নাতুল ফেরদৌস।
৫.বাম সংগঠনগুলোর ঐক্য ‘বৈচিত্র্যের ঐক্য’ – ভিপি ধ্রুব বড়ুয়া, জিএস সুদর্শন চাকমা, এজিএস জাকিরুল ইসলাম জসিম।
৬.‘দ্রোহ পর্ষদ’ – বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট সমর্থিত প্যানেল; ভিপি ঋজু লক্ষ্মী অবরোধ, জিএস ইফাজ উদ্দিন আহমদ ইমু, এজিএস শেখ জুনায়েদ কবির।
৭.‘রেভ্যুলেশন ফর স্টেট অফ হিউম্যানিটি’ – বিশ্ব ইনসানিয়াত বিপ্লব স্টুডেন্ট ফ্রন্টের প্যানেল; ভিপি কেফায়েত উল্লাহ, জিএস কাজী শাহরিয়ার উল্লাহ, এজিএস জোনায়েদ শিবলী।
৮.ছাত্র অধিকার পরিষদ ও ছাত্র মজলিস সমর্থিত ‘সর্বজনীন শিক্ষার্থী সংসদ’ – ভিপি তামজিদ উদ্দিন, জিএস সাকিব মাহামুদ রুমি, এজিএস মো. রোমান রহমান।
৯.‘অহিংস শিক্ষার্থী ঐক্য’ – ভিপি মুহাম্মদ ফরহাদুল ইসলাম, জিএস মুহাম্মদ ইয়াসিন উদ্দিন সাকির, এজিএস মুহাম্মদ শহীদুল ইসলাম শাহেদ।
১০.‘সার্বভৌম শিক্ষার্থী ঐক্য’ – ভিপি তাওসিফ মুত্তাকী চৌধুরী, জিএস সাজ্জাদ হোসেন, এজিএস সাঈদ মুহাম্মদ মুশফিক হাসান।
১১. ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী জোট’ – ভিপি আবির বিন জাবেদ, জিএস চৌধুরী তাসনিম জাহান শ্রাবণ, এজিএস পলাশ দে।
প্রতিদ্বন্দ্বিতার চিত্র-
এবারের চাকসু নির্বাচনে ছাত্রদল, ছাত্রশিবির ও ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের মতো প্রধান রাজনৈতিক সংগঠনের পাশাপাশি স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী, বাম সংগঠন এবং অরাজনৈতিক জোটগুলোও প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছে। এ কারণে নির্বাচন হবে বহুমুখী ও বৈচিত্র্যময় প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ।
এছাড়া প্রার্থীদের মাদক পরীক্ষার (ডোপ টেস্ট) বিধান থাকায় নির্বাচন হবে আরও স্বচ্ছ ও সুশৃঙ্খল।
শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা-
দীর্ঘ ৩৫ বছর পর নির্বাচন হওয়ায় শিক্ষার্থীরা বলছেন, নতুন নেতৃত্ব তাদের অধিকার আদায়ে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি ছাত্র রাজনীতিতে গঠনমূলক পরিবর্তন ও ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত হবে বলে তারা আশাবাদী।
চাকসু নির্বাচন কেবল একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়; বরং এটি ক্যাম্পাস রাজনীতির গণতান্ত্রিক চর্চা পুনরুজ্জীবিত করার সুযোগ হিসেবেই দেখা হচ্ছে। আগামী ১২ অক্টোবরের ভোটে কারা শিক্ষার্থীদের আস্থা অর্জন করতে পারেন, সেটিই এখন সবার কৌতূহলের কেন্দ্রবিন্দু।
Leave a comment