গাজীপুরের শ্রীপুরে চার দিন আগে নিখোঁজ হওয়া শিশু আনাছ খানের (৪) মরদেহ বাড়ির পাশের খাল থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় এক দম্পতিকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার ভয়াবহ বর্ণনা পেয়েছে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।
সোমবার (১০ নভেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার রাজাবাড়ি ইউনিয়নের চিনাশুখানিয়া গ্রামের বাংগালপাড়া বিল থেকে আনাছের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহত আনাছ খান স্থানীয় আল আমিন খানের ছেলে। এ ঘটনায় আটক হয়েছেন একই গ্রামের নজরুল ইসলাম (৫০) ও তাঁর স্ত্রী শাহীনুর আক্তার।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার (৭ নভেম্বর) সকালে খেলনা সাইকেল নিয়ে প্রতিবেশী নজরুল ইসলামের বাড়িতে খেলতে যায় শিশু আনাছ। সকাল ৯টার পর থেকে সে আর ফিরে আসেনি। পরিবারের সদস্যরা আশপাশে খোঁজাখুঁজি করেও কোনো সন্ধান না পেয়ে, শ্রীপুর থানায় আনাছের দাদা হাসেন আলী খান সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
তদন্তের সময় পুলিশ জানতে পারে, আনাছের খেলনা সাইকেলটি পাওয়া গেছে প্রতিবেশী সাজুর বাড়িতে। সাজুর দাবি, নজরুলের স্ত্রী শাহীনুর সাইকেলটি সেখানে রেখে গেছেন। এরপর থেকেই নজরুল দম্পতি পুলিশের সন্দেহের তালিকায় আসেন। গাজীপুর জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি হাসমত আলী জানান, নিখোঁজের পর থেকেই পুলিশ শিশুটির খোঁজে অভিযান চালায় এবং ডিবি পুলিশ সমান্তরালভাবে ছায়া তদন্ত শুরু করে। রোববার (৯ নভেম্বর) রাতে সন্দেহভাজন হিসেবে নজরুল ও শাহীনুরকে আটক করা হয়।
ওসি হাসমত আলী বলেন, “জিজ্ঞাসাবাদে আটক দম্পতি হত্যার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন।” তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, নজরুল ও শাহীনুর শিশুটিকে হত্যার পর একটি প্লাস্টিক বস্তায় ভরে বাড়ির পাশের সেপটিক ট্যাংকিতে লুকিয়ে রাখেন। পরে দুর্গন্ধ ছড়ানোর আশঙ্কায় তারা মরদেহটি ট্যাংকি থেকে বের করে বিলের পানিতে ফেলে দেন।
তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, আটক দম্পতি পুলিশের কাছে হত্যার মোটিভ সম্পর্কে স্পষ্ট কিছু বলেননি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ব্যক্তিগত বিরোধ বা প্রতিহিংসা থেকেই শিশুটিকে হত্যা করা হতে পারে।
শিশু আনাছের মরদেহ উদ্ধারের খবরে এলাকায় শোক ও ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। শত শত মানুষ ঘটনাস্থলে ভিড় করেন। স্থানীয়রা দাবি করেন, হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।চিনাশুখানিয়া গ্রামের এই হত্যাকাণ্ড গাজীপুর অঞ্চলে নতুন করে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। কয়েক মাস ধরেই জেলার বিভিন্ন স্থানে শিশু নিখোঁজের ঘটনাগুলো স্থানীয় প্রশাসনের নজরে এসেছে। ফলে এই ঘটনার পর পুলিশের তৎপরতা আরও বাড়ানো হয়েছে।
Leave a comment