গাজীপুরের কালিয়াকৈরে একটি আবাসিক হোটেলে তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগে তার প্রেমিকসহ দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে তরুণীর মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
পুলিশ জানায়, ভুক্তভোগী তরুণী ও তার প্রেমিক মমিনুল ইসলাম মোহন (২২)—দুজনেই আশুলিয়ায় বসবাস করতেন এবং তাদের মধ্যে দীর্ঘ তিন বছরের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) রাতে তারা গাজীপুরের চন্দ্রা এলাকার মান্নান প্লাজা নামের একটি আবাসিক হোটেলে অবস্থান নেন।
সেখানে তারা শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হন, যার পর তরুণী মারাত্মকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পুলিশের প্রাথমিক তদন্ত অনুযায়ী, একাধিকবার যৌন সম্পর্কের ফলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে অবস্থার অবনতি হলে রাতেই তারা স্থানীয় একটি ফার্মেসিতে সহায়তা চাইতে যান, কিন্তু কোনো চিকিৎসা না পেয়ে পরদিন (শুক্রবার) সকালে টাঙ্গাইলের কুমুদিনী হাসপাতালে নিয়ে যান।
হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তরুণীকে মৃত ঘোষণা করেন।হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তরুণীর অবস্থার গুরুতর দিকটি বুঝে তাকে দ্রুত ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দেয়। কিন্তু অ্যাম্বুলেন্সে তোলার কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি মারা যান। পুলিশ জানিয়েছে, মৃত্যুর পর সন্দেহজনক আচরণ করায় অ্যাম্বুলেন্স চালক বিষয়টি টের পেয়ে কৌশলে গাড়িটি ঘুরিয়ে মির্জাপুর থানায় নিয়ে যান এবং ভিকটিমের মরদেহসহ দুই অভিযুক্তকে পুলিশের হাতে তুলে দেন।
গ্রেপ্তার দুই ব্যক্তি হলেন—রাজশাহীর বাগমারা থানার সাজুরিয়া গ্রামের হেলাল উদ্দিনের ছেলে মমিনুল ইসলাম মোহন (২২) এবং পাবনার চাটমোহর থানার নিমাইচুরা গ্রামের আতিকুর রহমান (২৩)।
তাদের বিরুদ্ধে কালিয়াকৈর থানায় ধর্ষণ ও মৃত্যুর অভিযোগে মামলা দায়ের হয়েছে। পুলিশ ইতোমধ্যে অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে।
কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল মান্নান বলেন, “ধর্ষণ ও মৃত্যুর ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, ভিকটিম ও মূল অভিযুক্তের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তারা বৃহস্পতিবার রাতে হোটেলে অবস্থান করে। শারীরিক সম্পর্কের পর তরুণী অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে মারা যান।”
তিনি আরও জানান, তরুণীর মরদেহ টাঙ্গাইল সদর হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে এবং মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্ধারণে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন অপেক্ষমাণ।
ওসি মান্নান বলেন, “আমরা ঘটনাটিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছি। হোটেল কর্তৃপক্ষ ও অন্যান্য সাক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। প্রয়োজনে হোটেলের সিসিটিভি ফুটেজও পর্যালোচনা করা হবে।” এ ঘটনার পর স্থানীয় এলাকায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই তরুণীর মৃত্যুর ঘটনাকে নারীর প্রতি সহিংসতার একটি উদ্বেগজনক উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করছেন।
Leave a comment