কুষ্টিয়ায় সাত হত্যা মামলায় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে সংঘটিত এ হত্যাকাণ্ডে মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে তার বিরুদ্ধে।
প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সকালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এ প্রতিবেদন দাখিল করেন। তিনি জানান, তদন্ত সংস্থা ইনুর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের আটটি অভিযোগ এনেছে। প্রসিকিউশনের দাবি, প্রাথমিকভাবে তার বিরুদ্ধে অপরাধের যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, কুষ্টিয়ার ওই হত্যাকাণ্ডে নেতৃত্ব ও পরিকল্পনার ভূমিকা রাখেন হাসানুল হক ইনু। এ ঘটনায় সংঘটিত হত্যাযজ্ঞে নিরপরাধ মানুষ প্রাণ হারান।
এর আগে গত বছরের ২৬ আগস্ট রাজধানীর উত্তরা থেকে ইনুকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ট্রাইব্যুনাল তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। বর্তমানে তিনি কারাগারে বিভিন্ন মামলার বিচারাধীন অবস্থায় আছেন।
প্রসিকিউশন সূত্রে জানা গেছে, তদন্ত প্রতিবেদনে প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগীদের জবানবন্দি সংযুক্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি ঘটনাস্থলের আলামত ও আর্কাইভভিত্তিক তথ্য-উপাত্তও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এসব প্রমাণ আদালতে উপস্থাপিত হলে অভিযোগ গঠন প্রক্রিয়া এগিয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ইনুর বিরুদ্ধে আনা আটটি অভিযোগের মধ্যে রয়েছে—
• হত্যা
• নির্যাতন
• অপহরণ
• পরিকল্পিতভাবে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা
• এবং মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডে নেতৃত্ব প্রদান
প্রসিকিউশন বলছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনি সংঘর্ষ উসকে দেন, যার ফলশ্রুতিতে কুষ্টিয়ায় ওই সাতজনের মৃত্যু ঘটে।
হাসানুল হক ইনু দীর্ঘদিন ধরেই জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)-এর সভাপতি হিসেবে সক্রিয় রয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের মন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। তবে সর্বশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুষ্টিয়া আসনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন।
তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার বহু উত্থান-পতনে ভরপুর। ছাত্র আন্দোলন থেকে উঠে আসা ইনু মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন এবং পরবর্তী সময়ে জাতীয় রাজনীতির একজন গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে পরিণত হন। প্রসিকিউশন প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর এখন ট্রাইব্যুনাল অভিযোগ গঠন শুনানির প্রস্তুতি নেবে। অভিযোগ গঠন হলে আনুষ্ঠানিক বিচার প্রক্রিয়া শুরু হবে।
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইনুর মতো দীর্ঘ রাজনৈতিক ক্যারিয়ার সম্পন্ন একজন নেতার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ দাখিল বাংলাদেশের রাজনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। কুষ্টিয়ার সাত হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের মধ্য দিয়ে হাসানুল হক ইনুর বিরুদ্ধে বিচার প্রক্রিয়া আরও একধাপ এগিয়ে গেল। আদালতে অভিযোগ গঠন হলে মামলাটি নতুন গতি পাবে।
Leave a comment