প্রাকৃতিক দুর্যোগ মানবজীবনে গভীর প্রভাব ফেলে। ইসলামে এ ধরনের বিপদকে কেবল আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা বা সতর্কবার্তা হিসেবে দেখা হয়, তবে তা মোকাবিলায় সচেতনতা, প্রস্তুতি ও যৌক্তিক ব্যবস্থা গ্রহণকে বাধ্যতামূলক দায়িত্ব হিসেবে ধরা হয়েছে।
কোরআনে আল্লাহ তা’আলা বলেছেন: “হে মুমিনগণ, তোমরা ধৈর্য ধরো ও ধৈর্যে অটল থাকো এবং পাহারায় নিয়োজিত থাকো। আর আল্লাহকে ভয় করো, যাতে তোমরা সফল হও।” (সূরা আলে ইমরান: ২০০) এই আয়াতটি স্পষ্টভাবে দেখায় যে বিপদের সময় কেবল ধৈর্য ধারণ করলেই হবে না, সতর্কতা ও প্রস্তুতি নিতেও মনোযোগ দিতে হবে।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রস্তুতি গ্রহণে গাফিলতিকে দায়িত্বহীনতা হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন : “যে ব্যক্তি বিপদ থেকে নিজেকে ও পরিবারকে নিরাপদ রাখে, সে আল্লাহর নিকট সন্তুষ্ট হয়। তবে, যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেয় না, সে দায়িত্বহীন।” (জামে তিরমিজি: ২১৭৯)
আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস ও ইসলামের সামাজিক দায়িত্ব
১৯৮৯ সাল থেকে প্রতি বছর ১৩ অক্টোবর আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস পালন করা হয়। এই দিনে সাধারণ মানুষকে প্রস্তুতি ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া, সামাজিক সহায়তা এবং সুব্যবস্থাপনার গুরুত্ব নিয়ে সচেতন করা হয়।
ইসলামে সমাজ ও সম্প্রদায়ের মধ্যে সহযোগিতার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বিপদের সময় প্রার্থনা, সহযোগিতা ও সতর্কতা গ্রহণের মাধ্যমে পূর্ণ সুরক্ষা সম্ভব। দুর্যোগ প্রশমন দিবস আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে প্রাকৃতিক বিপদকে অবহেলা করা যায় না। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে এটি মানবীয় দায়িত্ব—ধৈর্য ধারণ, প্রস্তুতি গ্রহণ এবং সহমর্মিতা প্রদর্শন—এই তিন মূলনীতির ওপর অবিচল থাকা জরুরি।
বাস্তব পদক্ষেপ ও সহায়তা
শুধু সচেতন হওয়াই যথেষ্ট নয়; বাস্তব পদক্ষেপ নেওয়াও অপরিহার্য। দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় সাহায্য পৌঁছে দেওয়া, সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ এবং প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদানের মাধ্যমে বিপদকে কমানো সম্ভব। ইসলামী শিক্ষার আলোকে এটি কেবল নৈতিক দায়িত্ব নয়, বরং সমাজের প্রতি গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য হিসেবেও বিবেচিত।
Leave a comment