ইসরায়েলের হেফাজত থেকে ফেরত পাওয়া ফিলিস্তিনিদের মরদেহে নির্যাতনের চিহ্ন পাওয়া গেছে বলে দাবি করেছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটির (আইসিআরসি) মাধ্যমে ৪৫ জন ফিলিস্তিনির মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র-নেতৃত্বাধীন যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় এখন পর্যন্ত মোট ৯০টি মরদেহ ফেরত এসেছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, চিকিৎসা দলগুলো মরদেহগুলো পরীক্ষা, নথিভুক্তকরণ ও পরিবারের কাছে হস্তান্তরের কাজ করছে অনুমোদিত চিকিৎসা প্রোটোকল অনুযায়ী। তবে ফরেনসিক দলগুলোর মতে, অনেক মরদেহ “ভয়াবহ অবস্থায়” ছিল, যেগুলোর মধ্যে বেশিরভাগেই নির্যাতনের স্পষ্ট চিহ্ন পাওয়া গেছে।
আল–জাজিরা’র প্রতিবেদনে বলা হয়, ফেরত আসা কিছু মরদেহ চোখ বাঁধা ও হাতকড়া পরানো অবস্থায় ছিল—যা ইঙ্গিত করে, আটক অবস্থায় হত্যা করা হয়েছে। চিকিৎসা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইসরায়েলি অবরোধের কারণে গাজায় ডিএনএ পরীক্ষার সরঞ্জাম প্রবেশ করতে না পারায় পরিচয় শনাক্তকরণে বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। ফলে মরদেহ শনাক্তে তাদের পোশাক বা শারীরিক বৈশিষ্ট্যের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।
গাজার নাসের হাসপাতালে ফরেনসিক দলের সদস্য সামেহ হামাদ জানান, “ফেরত পাওয়া মরদেহগুলোতে নির্যাতন ও হত্যার স্পষ্ট চিহ্ন রয়েছে। অনেকের গলায় দড়ি বা বাঁধন দেখা গেছে।” স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মরদেহগুলোর বেশিরভাগই ২৫ থেকে ৭০ বছর বয়সী পুরুষদের। অধিকাংশের পোশাক বেসামরিক হলেও, কয়েকজনের পরনে যুদ্ধের পোশাক ছিল।
মন্ত্রণালয় ৩২টি অজ্ঞাত মরদেহের ছবি প্রকাশ করেছে, যাতে নিখোঁজদের পরিবার সদস্যরা তাদের শনাক্ত করতে পারেন। অনেক মরদেহ পচে যাওয়া, পুড়ে যাওয়া বা অঙ্গহানি অবস্থায় ছিল বলে কর্মকর্তারা জানান। ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, গাজা যুদ্ধের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৬৮ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। রেড ক্রসের হিসাব অনুযায়ী, এখনও হাজারো মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন।
২৫ বছর বয়সী নিখোঁজ যুবক আহমেদের মা রাসমিয়া কুদেইহ নাসের হাসপাতালের বাইরে ছেলের মরদেহের অপেক্ষায় ছিলেন। তিনি বলেন, “আল্লাহ চাইলে, আমার ছেলে এই মরদেহগুলোর মধ্যেই থাকবে।”
মানবাধিকার সংগঠন ও জাতিসংঘের তদন্ত কমিশন ইসরায়েলকে গাজায় গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছে। দক্ষিণ আফ্রিকা ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলা করেছে, যদিও ইসরায়েল এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
Leave a comment