ইরানে হিজাববিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে এক ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। এক নিরাপত্তা কর্মকর্তাকে হত্যায় যুক্ত থাকার অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
ইরানের বিচার বিভাগের সংবাদমাধ্যম মিজান জানায়, বাহরামিয়ান ২০২২ সালের ডিসেম্বরে পুলিশ সদস্যদের গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি চালান। এতে কর্মকর্তা মোহসিন রেজাই নিহত এবং আরও কয়েকজন আহত হন। এ ঘটনায় আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করে।
তবে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, মামলার তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ছিল না। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল অভিযোগ করেছে, ইরানি কর্তৃপক্ষ নির্যাতন, ভয়ভীতি প্রদর্শন ও পরিবারের ক্ষতির হুমকি দিয়ে আন্দোলনকারীদের কাছ থেকে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায় করে। পরে সেই স্বীকারোক্তিকে প্রমাণ হিসেবে আদালতে ব্যবহার করা হয়।
অ্যামনেস্টির এক বিবৃতিতে বলা হয়, “ইরানের আদালত আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হচ্ছে। স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের আশ্রয় নেওয়া হচ্ছে।”
২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে ২২ বছর বয়সী তরুণী মাশা আমিনির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ইরানে হিজাববিরোধী আন্দোলনের সূচনা হয়। তেহরানে নীতি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ দাবি করেছিল, তিনি হৃদ্রোগে মারা গেছেন। কিন্তু পরিবারের দাবি, আমিনির শরীরে মারধরের স্পষ্ট চিহ্ন ছিল।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে নারীরা “নারী, জীবন, স্বাধীনতা” শ্লোগান তুলে রাস্তায় নামে। সরকার কঠোর দমননীতি অবলম্বন করে আন্দোলন নিয়ন্ত্রণে আনে। হাজারো মানুষ গ্রেপ্তার হন, অনেকের বিরুদ্ধে কঠোর সাজা ঘোষিত হয়।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম রয়টার্স-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, মেহরান বাহরামিয়ানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের মধ্য দিয়ে এখন পর্যন্ত হিজাববিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত অন্তত ১০ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, এসব শাস্তি আন্দোলন দমনে সরকারের কৌশলের অংশ। যদিও ইরানি কর্তৃপক্ষ দাবি করে, অভিযুক্তরা রাষ্ট্রবিরোধী সহিংস কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইরানের এ ধরনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরকে মানবাধিকারের গুরুতর লঙ্ঘন বলে আখ্যা দিয়েছে। জাতিসংঘও পূর্বে ইরানের বিচার প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বিশ্লেষকদের মতে, হিজাব ইস্যুকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া এই আন্দোলন ইরানে দীর্ঘমেয়াদে সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের বীজ বপন করেছে। তবে সরকার কঠোর অবস্থান বজায় রেখে আন্দোলনের গতি রুদ্ধ করতে সচেষ্ট।
মেহরান বাহরামিয়ানের মৃত্যুদণ্ড ইরানের কঠোর দমননীতির নতুন উদাহরণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক চাপ থাকা সত্ত্বেও দেশটির বিচার ব্যবস্থা পরিবর্তনের কোনো লক্ষণ এখনো দৃশ্যমান নয়। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, এভাবে আন্দোলনকারীদের দমন করলে সামাজিক ক্ষোভ আরও গভীর হবে।
Leave a comment