ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইউসুফ খান পাঠানকে পেটানোর একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়েছে। ১৩ সেকেন্ডের সেই ভিডিওতে দেখা যায়, একটি কক্ষে তাঁকে কয়েকজন তরুণ শারীরিকভাবে লাঞ্ছনা করছেন। একজন মাস্ক পরা তরুণ কাঠের খাপ দিয়ে ইউসুফ খানের শরীরে আঘাত করছেন এবং অপর একজন তাঁকে ধরে রেখেছেন।
ভিডিওটি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে গত বুধবার রাতে, যদিও ঘটনাটি ঘটেছে প্রায় এক মাস আগে। ভিডিওতে দেখা যাওয়া ব্যক্তি যে ইউসুফ খান পাঠান, সেটি নিশ্চিত করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য কাজী আজাদ জাহান (শামীম)।
আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে, অধ্যাপক ইউসুফ খান গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর আত্মগোপনে যান এবং ঢাকার ধানমন্ডি এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস শুরু করেন। সেখানেই গত ১৬ এপ্রিল বিকেলে ধানমন্ডি লেকের কাছে চা খেতে যাওয়ার পথে মোটরসাইকেলে আসা একদল যুবক তাঁকে পরিচয় গোপন রেখে তুলে নিয়ে যায়। একটি বাসায় আটকে রেখে চলে ব্যাপক মারধর এবং ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। টাকা দিতে না পারায় পুলিশে দেওয়ার ভয় দেখানো হয়। পরে ৫ লাখ টাকা দেওয়ার আশ্বাস দিলে তাঁকে বাসায় ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
ঘটনার কিছুদিন পর বাসা পরিবর্তন করেন ইউসুফ খান। ধারণা করা হচ্ছে, তাঁকে বাসায় না পেয়ে হামলাকারীরা ভিডিওটি ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়।
বৃহস্পতিবার সকালে ময়মনসিংহ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য মোহিত উর রহমান ভিডিওটি নিজের ফেসবুক ওয়ালে শেয়ার করে লিখেন, “অধ্যাপক ইউসুফ খান পাঠান একজন নির্বিবাদী মানুষ… বাকিটা আপনাদের বিবেকের কাছে ছেড়ে দিলাম।” পরবর্তীতে ভিডিওটি আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেজেও পোস্ট করা হয়, যেখানে দাবি করা হয়—চাঁদা না দেওয়ায় বিএনপির সন্ত্রাসীরা এই হামলা চালিয়েছে।
ময়মনসিংহে কর্মরত পুলিশের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ইউসুফ খানকে আটক করা হয়েছিল—এমন তথ্য পুলিশের কাছ থেকে জানতে চেয়েছিলো একটি দল, কিন্তু তাঁকে পুলিশ হেফাজতে দেওয়া হয়নি। কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মো. সফিকুল ইসলাম খান বলেন, ইউসুফ খান বিস্ফোরক মামলার আসামি হলেও পুলিশ তাকে আটক করেনি এবং ভাইরাল ভিডিও সম্পর্কে তাঁর জানা নেই।
এই ভিডিওকে ঘিরে দলীয় অঙ্গনে তীব্র প্রতিক্রিয়া ও বিতর্ক ছড়িয়ে পড়েছে। দলীয় নেতারা ভিডিও প্রকাশের সময় ও উদ্দেশ্য নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন। ইউসুফ খান বর্তমানে নিরাপদে রয়েছেন বলে জানা গেছে, তবে পুরো ঘটনার পেছনে থাকা নেপথ্য শক্তি ও উদ্দেশ্য এখনো পরিষ্কার নয়।
এই ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে বলে প্রশাসনের একটি সূত্র জানিয়েছে।
Leave a comment