Home দিবস আজ আন্তর্জাতিক চা দিবস
দিবস

আজ আন্তর্জাতিক চা দিবস

Share
Share


প্রতি বছর ২১ মে আন্তর্জাতিক চা দিবস উদযাপনের মধ্য দিয়ে বিশ্বের কোটি কোটি চা–শ্রমিক, উৎপাদক এবং চা শিল্পের সঙ্গে জড়িত মানুষদের অবদানকে স্মরণ ও সম্মান জানানো হয়। জাতিসংঘের স্বীকৃত এই দিবস কেবল একটি পানীয়ের গুরুত্ব নয়, বরং একটি বিস্তৃত অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাঠামোর প্রতিচ্ছবি হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে, যা বহু উন্নয়নশীল দেশের কর্মসংস্থান ও বৈদেশিক আয়ের বড় উৎস।
আন্তর্জাতিক চা দিবস প্রথম উদযাপিত হয় ২০০৫ সালে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে। এরপর থেকে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, কেনিয়া, মালাউই, মালয়েশিয়া, উগান্ডা ও তানজানিয়ার মতো চা উৎপাদনকারী দেশগুলো প্রতিবছর দিবসটি পালন করে আসছে। শুরুতে ১৫ ডিসেম্বর দিবসটি পালন করা হলেও ২০১৯ সালে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (FAO) সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২১ মে-কে আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক চা দিবস ঘোষণা করা হয়। ২০২০ সাল থেকে তা কার্যকর হয়।
এই দিবস পালনের পেছনে রয়েছে একাধিক তাৎপর্যপূর্ণ লক্ষ্য। অন্যতম হলো—চা শিল্পে জড়িত শ্রমিকদের অধিকার, ন্যায্য মজুরি, স্বাস্থ্যসেবা এবং নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার বিষয়টি বৈশ্বিক পর্যায়ে তুলে ধরা। পাশাপাশি, বৈশ্বিক বাণিজ্যে চায়ের মূল্য এবং এই বাণিজ্যের লাভ থেকে উৎপাদনকারীদের প্রাপ্য অংশ নিয়েও সচেতনতা তৈরি করাই এই দিবসের অন্যতম উদ্দেশ্য।
বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় পানীয় চা শুধু স্বাদের নয়, বরং একটি সংস্কৃতি, অর্থনীতি এবং ইতিহাসের ধারক। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোয় এটি কেবল দৈনন্দিন অভ্যাস নয়, বরং রাজনীতি, সাহিত্য ও লোকজ জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। চা উৎপাদনকারী অঞ্চলগুলো—বিশেষত পাহাড়ি এলাকা ও বনভূমির আশপাশে গড়ে ওঠা চা–বাগানগুলো বহু মানুষের জীবিকার প্রধান ভিত্তি। বাংলাদেশের শ্রীমঙ্গল, ভারতের আসাম ও দার্জিলিং কিংবা শ্রীলঙ্কার নুয়ারা এলিয়া—এসব জায়গা শুধু উৎপাদন কেন্দ্র নয়, বরং চা–সংস্কৃতির প্রাণ।
চা দিবস উপলক্ষে প্রতি বছর বিভিন্ন দেশের শ্রমকল্যাণ সংস্থা, কৃষক সংগঠন এবং পরিবেশবাদী প্রতিষ্ঠান আলোচনা সভা, র‍্যালি, প্রদর্শনী ও গণজমায়েতের আয়োজন করে থাকে। এতে যেমন শ্রমিকদের জীবনমানের দিকটি আলোচিত হয়, তেমনি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং পরিবেশবান্ধব উৎপাদন পদ্ধতির প্রয়োজনীয়তা নিয়েও উঠে আসে আলোচনা।
এই দিবসে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন ন্যায্য বাণিজ্যের গুরুত্ব পুনর্ব্যক্ত করে এবং চা–উৎপাদনকারী দেশগুলোকে আরো টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক কাঠামো গড়ে তুলতে উৎসাহিত করে।
চা একটি প্রাণবন্ত উদাহরণ, যেখানে প্রান্তিক শ্রমিকের ঘাম, প্রকৃতির দান এবং বিশ্ববাজারের চাহিদা একসঙ্গে মিশে একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক চক্র গড়ে তোলে। আন্তর্জাতিক চা দিবস তাই শুধু চায়ের নয়, শ্রমের, সম্মানের ও ন্যায়ের উৎসবে পরিণত হয়েছে।

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Don't Miss

পাকিস্তানে পুলিশের গাড়িতে আইইডি বিস্ফোরণ, নিহত ৩

পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় খায়বার পাখতুনখোয়া প্রদেশে পুলিশের গাড়িকে লক্ষ্য করে শক্তিশালী আইইডি বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। বুধবার (৩ ডিসেম্বর) দেরা ইসমাইল খান জেলার পানিয়ালা এলাকায়...

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামালকে প্রত্যর্পণ করবে ভারত : প্রেস সচিব

জুলাই মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে ভারত, বাংলাদেশে প্রত্যর্পণ করবে বলে দাবি করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি...

Related Articles

আজ বাংলা একাডেমির ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী

বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের গবেষণা, চর্চা ও বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলা...

আজ বিশ্ব এইডস দিবস

আজ ১ ডিসেম্বর বিশ্ব এইডস দিবস। প্রতি বছর এই দিনে দিবসটি পালিত...

আজ বিশ্ব পুরুষ দিবস

বিশ্বজুড়ে প্রতিদিনই কোনো না কোনো দিবস পালনের প্রচলন রয়েছে। তবে এর মাঝে...

আজ মওলানা ভাসানীর ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী

আজ মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৭৬ সালের...