বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সন্ত্রাসবিরোধী আইন ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সংশোধিত বিধান অনুসারে আওয়ামী লীগের সম্পদ বাজেয়াপ্তের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
বাংলাদেশের সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯-এর ধারা ২০ অনুযায়ী, যদি কোনো সংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়, তবে সরকারের অধিকার রয়েছে সেই সংগঠনের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার। এই ধারা অনুযায়ী, নিষিদ্ধ সংগঠনের কার্যালয় বন্ধ, ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ এবং সম্পত্তি জব্দ করা যেতে পারে।
সম্প্রতি, অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। এর আগে, একই আইনের আওতায় ছাত্রলীগকেও নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। এই আইনের ফলে, আওয়ামী লীগের সম্পদ বাজেয়াপ্তের প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে।
আওয়ামী লীগের আর্থিক সম্পদের পরিসংখ্যান অনুযায়ী দলটির বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে মোট ৩৭ কোটি ৮২ লাখ ৯৬ হাজার ৬১০ টাকা জমা রয়েছে। এর মধ্যে: রাষ্ট্রায়ত্ত একটি ব্যাংকের ধানমন্ডি শাখায়: ৮ কোটি ৯৭ লাখ ৮৯ হাজার ৬৭৪ টাকা, বেসরকারি একটি ব্যাংকের ধানমন্ডি শাখায় : ২০ কোটি ৬৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৭০ টাকাএবং অন্যান্য ব্যাংক হিসাবে: ৮ কোটি ১৮ লাখ ২৮ হাজার ২৬৬ টাকা রয়েছে।
এছাড়া, আওয়ামী লীগের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) ১৫টি ব্যাংক হিসাবে মোট ৪০ কোটি ৮৩ লাখ ৬৬ হাজার ১৩৬ টাকা জমা রয়েছে। সব মিলিয়ে, দলটির ব্যাংক হিসাবে মোট জমা অর্থের পরিমাণ প্রায় ৭৮ কোটি ৬৬ লাখ টাকা।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়টি ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে অবস্থিত। ২০১৬ সালে নির্মাণকাজ শুরু হয়ে ২০১৮ সালে সম্পন্ন হয়। ভবনটি ১০ তলা বিশিষ্ট, যার প্রতিটি তলার আয়তন প্রায় ৩,১০০ থেকে ৪,১০০ বর্গফুট।
সন্ত্রাসবিরোধী আইন অনুযায়ী, যদি প্রতীয়মান হয় যে কোনো সংগঠনের সম্পত্তি অবৈধভাবে অর্জিত হয়েছে অথবা অপরাধ সংঘটনে ব্যবহৃত হয়েছে, তবে আদালতের মাধ্যমে সেই সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা যেতে পারে।
সম্প্রতি, সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন সংশোধন করে একটি অধ্যাদেশ জারি করেছে। এই সংশোধনের মাধ্যমে, ট্রাইব্যুনাল এখন কোনো রাজনৈতিক দল, তার অঙ্গসংগঠন বা সমর্থক গোষ্ঠীকে শাস্তি দিতে পারবে। যদি প্রতীয়মান হয় যে কোনো সংগঠন মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত, তবে ট্রাইব্যুনাল সেই সংগঠনের কার্যক্রম স্থগিত বা নিষিদ্ধ করতে পারবে এবং সম্পত্তি জব্দ করতে পারবে।
২০১৩ সালে, গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে সংশোধনী এনে সংগঠনের বিচারের সুযোগ রাখা হয়েছিল। তবে, সংগঠনের সাজা কী হবে, তা স্পষ্ট করা হয়নি। এখন, অন্তর্বর্তী সরকার সেই সংশোধনী এনে দল হিসেবে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আওয়ামী লীগের বিচারের পথ তৈরি করেছে।
আওয়ামী লীগের সম্পদ বাজেয়াপ্তের সম্ভাবনা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের নতুন নির্দেশনা দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনতে পারে। এই পদক্ষেপের ফলে, রাজনৈতিক দলগুলোর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এবং সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রম আরও কার্যকর করা সম্ভব হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
Leave a comment