ভারতের উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের হাপুর জেলায় ঘটে গেছে এক অবিশ্বাস্য চিকিৎসা ঘটনা। এক যুবকের পেট থেকে অপারেশনের মাধ্যমে বের করা হয়েছে ২৯টি স্টিলের চামচ, ১৯টি টুথব্রাশ এবং ২টি কলম। এ ঘটনায় বিস্মিত হয়ে পড়েছেন চিকিৎসক থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ।
স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, ওই ব্যক্তি একটি ডি-অ্যাডিকশন সেন্টারে (নেশামুক্তি কেন্দ্র) চিকিৎসাধীন ছিলেন। একদিন হঠাৎ তীব্র পেটব্যথায় কাতর হয়ে পড়েন তিনি। দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা এক্স-রে ও স্ক্যানিংয়ের মাধ্যমে তার পেটে অস্বাভাবিক কিছু বস্তু থাকার বিষয়টি শনাক্ত করেন।
রোগীর অবস্থা দ্রুত অবনতি হতে থাকায় চিকিৎসকরা অবিলম্বে অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন। দীর্ঘ সময় ধরে চলা জটিল সেই অপারেশনে একে একে বেরিয়ে আসে অবিশ্বাস্য সব সামগ্রী—চামচ, টুথব্রাশ এবং কলম।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, রোগীর অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন ছিল। যেকোনো মুহূর্তে পেট ফেটে যাওয়া বা মারাত্মক অভ্যন্তরীণ সংক্রমণের ঝুঁকি তৈরি হয়েছিল। তবে সময়মতো অস্ত্রোপচার করায় তার জীবন রক্ষা পেয়েছে। বর্তমানে তিনি স্থিতিশীল অবস্থায় আছেন।
এক চিকিৎসক বলেন, “আমরা চিকিৎসাজীবনে অনেক জটিল কেস দেখেছি, কিন্তু একজন মানুষের পেট থেকে এতগুলো অখাদ্য বস্তু একসঙ্গে বের করা সত্যিই বিরল ঘটনা।”
চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, রোগী সম্ভবত Pica নামক মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের অস্বাভাবিক জিনিস—যেমন মাটি, কাচ, ধাতু বা অখাদ্য বস্তু—গিলে ফেলার প্রবণতা দেখা যায়। এটি সাধারণত মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার একটি লক্ষণ, যা দীর্ঘমেয়াদে প্রাণঘাতী হতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার যথাযথ চিকিৎসা ও সামাজিক সচেতনতা না থাকায় এ ধরনের ঘটনা ঘটে।
চিকিৎসকদের মতে, সময়মতো অস্ত্রোপচার না হলে ঘটনাটি প্রাণঘাতী হতে পারত। এ ধরনের ঘটনা প্রমাণ করে যে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা অবহেলা করলে তা শারীরিকভাবেও গুরুতর বিপদ ডেকে আনতে পারে। চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা বলছেন, এই ঘটনা শুধু একটি চিকিৎসা বিস্ময় নয়, বরং এটি সমাজকে মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতার বিষয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে।
উত্তরপ্রদেশের এই ব্যতিক্রমী চিকিৎসা ঘটনা আবারও মনে করিয়ে দিল—মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাকে অবহেলা করলে তা ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে। চিকিৎসকরা বলছেন, নিয়মিত মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও চিকিৎসার মাধ্যমে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব।
Leave a comment