ভারতীয় বার্তা সংস্থা আইএএনএস-এর এক বিশেষ প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা, যিনি বর্তমানে ভারতের রাজধানী দিল্লিতে নির্বাসিত জীবন কাটাচ্ছেন, তিনি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক মহলে প্রতিবেদনটি বেশ আলোড়ন তুলেছে।
আইএএনএস লিখেছে, ইমেইলের মাধ্যমে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা খালেদা জিয়ার দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন এবং তাঁর বর্তমান চিকিৎসা অবস্থা নিয়ে সরাসরি উদ্বেগ প্রকাশ করেন। খালেদা জিয়া যেহেতু বর্তমানে হাসপাতালে সিসিইউতে ভর্তি এবং শারীরিক অবস্থাও সংকটাপন্ন, সে বিষয়ে তাঁর মতামত জানতে চাইলে শেখ হাসিনা বলেন, “বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ হয়েছেন শুনে আমি অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। আমি প্রার্থনা করি তিনি যাতে সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন।’ ।”
দেশের ৫৪ বছরের ইতিহাসে তাঁদের সম্মিলিত নেতৃত্বের সময়কাল তিন দশকেরও বেশি। ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনার ১৫ বছরের একচ্ছত্র শাসনের অবসান ঘটে এবং পরবর্তীতে তিনি ভারতে চলে যান। সেই সময় রাষ্ট্রীয় পরিবর্তনের ফলে খালেদা জিয়ার পূর্ণ মুক্তি নিশ্চিত হয় এবং চলমান দুর্নীতি মামলায় আদালত তাঁকে খালাস দেন।
অন্যদিকে, মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়—যা নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এখনও আলোচনা অব্যাহত আছে। এছাড়াও প্লট দুর্নীতিসহ কয়েকটি মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে আরও দণ্ডের রায় ঘোষিত হয়েছে। এ সবকিছু মিলিয়ে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা এখনো পুরোপুরি কাটেনি।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতাদের অভিযোগ—সে সময়কার বিএনপি নেতৃত্বাধীন সরকারের সমর্থন বা অবহেলা ছাড়া এমন হামলা সম্ভব ছিল না। এ ঘটনা দুই দলের মধ্যে মতানৈক্যকে আরও তীব্র করে তোলে। ফলে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার সম্পর্ক বরাবরই তিক্ততায় ভরা ছিল।
৭৯ বছর বয়সী বেগম খালেদা জিয়া বহু দিন ধরে হৃদ্যন্ত্রের জটিলতা, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস, লিভার সিরোসিস ও কিডনি রোগসহ একাধিক দীর্ঘস্থায়ী সমস্যায় ভুগছেন। গত ২৩ নভেম্বর নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য তাঁকে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাঁর ফুসফুসে সংক্রমণ শনাক্ত করেন। এরপর তাঁকে দ্রুত সিসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। বিএনপি নেতাদের ভাষ্যে, তাঁর অবস্থা বর্তমানে “অত্যন্ত সংকটাপন্ন”।
স্থানীয় ডাক্তারদের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞ চিকিৎসকদের একটি দল তাঁর সার্বিক চিকিৎসা তত্ত্বাবধান করছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে লন্ডনে স্থানান্তরের উদ্যোগ নেওয়া হলেও হঠাৎ শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় এখনো তা সম্ভব হয়নি। পরিস্থিতি আরও স্থিতিশীল না হলে এমন উদ্যোগ ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে বলে চিকিৎসকরা মনে করছেন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “চেয়ারপারসনকে বিদেশে নেওয়ার সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ নির্ভর করছে তাঁর শারীরিক সক্ষমতা, বিমানযোগে ভ্রমণ উপযোগী কিনা এবং মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশের ওপর।” তিনি আরও জানান, পরিবার ও দলের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দুর্নীতি মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল। ২০২০ সালে মহামারির সময় শর্তসাপেক্ষে তাঁর সাজা স্থগিত করে সাময়িক মুক্তি দেওয়া হয়। তখন বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি চাইলেও শেখ হাসিনার সরকার সে অনুরোধ নাকচ করে দেয়।
সূত্র: আইএএনএস
Leave a comment