ইউরোপে পৌঁছানোর স্বপ্নে ভূমধ্যসাগরের প্রাণঘাতী পথ পাড়ি দিতে গিয়ে আবারও ঘটল বড় ধরনের ট্র্যাজেডি। গ্রিসের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় ক্রিট দ্বীপের উপকূলে একটি আধাভাসা নৌকা থেকে কমপক্ষে ১৭ জন অভিবাসী ও আশ্রয়প্রার্থীর নিথর দেহ উদ্ধার করেছে গ্রিস কোস্টগার্ড। নিহত সবাই তরুণ ও পুরুষ ছিলেন।
শনিবার (৬ ডিসেম্বর) ক্রিটের দক্ষিণ-পশ্চিমে প্রায় ২৬ নটিক্যাল মাইল দূরে নৌকাটিকে প্রথম শনাক্ত করে একটি তুর্কি কার্গো জাহাজ। পরে তারা গ্রিক কর্তৃপক্ষকে খবর দিলে কোস্টগার্ড দুটি জাহাজ দ্রুত ঘটনাস্থলে পাঠিয়ে উদ্ধার অভিযান শুরু করে। অভিযানে ইইউ সীমান্তরক্ষী সংস্থা ফ্রন্টেক্সও যোগ দেয়।
ভয়াবহ এই ঘটনায় মাত্র দুইজনকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। তারা বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এবং তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে স্থানীয় চিকিৎসকেরা জানিয়েছে।
উদ্ধার হওয়া দু’জন জানিয়েছেন, নৌকাটির দুই পাশ দেবে গিয়ে ভেতরের যাত্রীদের ছোট জায়গায় গাদাগাদি করে বসতে হয়েছিল। খারাপ আবহাওয়া ও উত্তাল সাগরের কারণে নৌকা দ্রুত ভারসাম্য হারাতে থাকে। নৌকায় পর্যাপ্ত পানি, খাবার কিংবা উষ্ণতার ব্যবস্থা ছিল না। এমনকি উদ্ধার করার সময়ও নৌকার ভেতরে পানি ঢুকে দ্রুত ডুবে যাচ্ছিল।
উদ্ধারকৃত ১৭ জনের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। চিকিৎসকদের ধারণা, পানিশূন্যতা, হাইপোথার্মিয়া অথবা দমবন্ধ হয়ে মৃত্যু হতে পারে। তবে নিশ্চিত হতে ময়নাতদন্ত রিপোর্টের অপেক্ষা করতে হবে।
গ্রিস কোস্টগার্ডের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন,“নৌকাটি ভেঙে পড়ে আধাভাসা অবস্থায় ছিল। যাত্রীরা অত্যন্ত প্রতিকূল পরিবেশে সেখানে আটকে ছিলেন।
আল জাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত এক বছরে লিবিয়া থেকে ইউরোপে পৌঁছানোর জন্য নতুন রুট হিসেবে ক্রিট দ্বীপকে বেছে নিচ্ছেন অভিবাসীরা। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) জানিয়েছে, চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ১৬ হাজার ৭৭০ জনের বেশি আশ্রয়প্রার্থী এই দ্বীপে পৌঁছেছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, লিবিয়ার দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক অস্থিরতা, মিলিশিয়াদের নিয়ন্ত্রণ এবং মানবপাচারকারীদের দৌরাত্ম্যের কারণে এ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ সমুদ্রপথে অভিবাসীদের ঢল বাড়ছে। অনেকে ইউরোপে আশ্রয়ের আশায় জীবন বাজি রেখে মরিয়া হয়ে এসব নৌকায় যাত্রা করছেন।
Leave a comment