নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার ভিটিকান্দি গ্রামে বিড়ালে কবুতরের বাচ্চা খাওয়াকে কেন্দ্র করে দুই পরিবারের মধ্যে সংঘর্ষে নাসির উদ্দিন (৫৫) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। রবিবার দুপুরের এই ঝগড়া পরদিন সোমবার রাতে মৃত্যুর ঘটনায় রূপ নেয়। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন কমপক্ষে পাঁচজন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শম্ভুপুরা ইউনিয়নের ভিটিকান্দি গ্রামে মো. আকতার হোসেন ও তার প্রতিবেশী মো. আসাদুল্লাহ পরিবারের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে পারিবারিক বিরোধ চলছিল। তবে রবিবারে খুবই তুচ্ছ কারণে ঘটনার সূত্রপাত হয়—আসাদুল্লাহর একটি পালিত বিড়াল আকতারের একটি কবুতরের বাচ্চা খেয়ে ফেলে।
ঘটনার দিন দুপুরে এই বিষয় নিয়ে দুই পরিবারের সদস্যদের মধ্যে প্রথমে তুমুল কথাকাটাকাটি শুরু হয়। বিরোধ বাড়তে থাকলে আকতার হোসেনের বড় ভাই কৃষক নাসির উদ্দিনসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা সেখানে উপস্থিত হন। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, পরিস্থিতি দ্রুত উত্তেজনায় রূপ নেয় এবং একপর্যায়ে আসাদুল্লাহর পরিবারের সদস্যরা হামলার উদ্যোগ নেয়।
অভিযোগ অনুযায়ী, আসাদুল্লাহর নেতৃত্বে তার ছেলে আবির হোসেন, অভি মিয়া, ভাতিজা রাসেল মিয়া, স্ত্রী জুলেখা আক্তার বেবি এবং আরও কয়েকজন ধারালো ছোরা, লাঠি–সোঁটা নিয়ে আকতার হোসেনের পরিবারের ওপর হামলা চালান। এতে আকতার হোসেন, তার স্ত্রী সেলিনা বেগম, চাচী রওশন আরা, বড় ভাই নাসির উদ্দিন ও নাসির উদ্দিনের স্ত্রী নাজমা বেগম গুরুতর আহত হন।
স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে সোনারগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। তবে নাসির উদ্দিনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে দ্রুত একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার রাতে তার মৃত্যু হয়।
নিহতের ছোট ভাই মো. আলাউদ্দিন মিয়া বলেন, “আমার ভাই আকতার কবুতর লালন করেন। আসাদুল্লাহর বিড়াল তাদের কবুতরের বাচ্চা খেয়ে ফেললে, বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে গেলে তারা উল্টো রেগে গিয়ে আমাদের ওপর হামলা চালায়। আমার বড় ভাই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেলেন। এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।”
ঘটনার পর সোমবার রাত থেকেই অভিযুক্ত আসাদুল্লাহ ও তার পরিবারের সদস্যরা বাড়িঘরে তালা ঝুলিয়ে আত্মগোপনে চলে যায়। সোনারগাঁও থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. রাশেদুল হাসান খান জানান, “রোববার হামলার ঘটনায় একটি অভিযোগ গ্রহণ করা হয়েছিল। পরে একজন আহত ব্যক্তি মারা যাওয়ায় অভিযোগটি হত্যা মামলা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।”
স্থানীয়রা জানায়, গ্রামে তুচ্ছ বিষয় নিয়ে প্রায়ই উত্তেজনা দেখা দিলেও এ ধরনের মারাত্মক সহিংসতার ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যায়নি।বর্তমানে নিহত নাসির উদ্দিনের মরদেহ নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
Leave a comment