নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলায় চকলেটের লোভ দেখিয়ে ছয় বছর বয়সী মিজানুর রহমান আশরাফুলকে নির্মমভাবে হত্যার দায়ে দুই আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
সোমবার (২৪ নভেম্বর) বিকেলে নোয়াখালী জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক ড. মুহাম্মদ মোরশেদ ইমতিয়াজ এ রায় দেন। একই সঙ্গে দণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামিকে ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও ছয় মাসের সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী পিপি অ্যাডভোকেট শাহাদাত হোসেন জানান, ২০২১ সালের ২ এপ্রিল সেনবাগ উপজেলার কাদরা ইউনিয়নের নজরপুর গ্রামে এ ঘটনাটি ঘটে। পারিবারিক কলহের জেরে শিশুর মা পান্না আকতারের আগের স্বামী আলাউদ্দিন (৪০) প্রতিশোধস্পৃহা থেকে আশরাফুলকে বাড়ি থেকে চকলেট দেওয়ার লোভ দেখিয়ে বাইরে ডেকে নিয়ে যায়।
শিশুটিকে ডেকে নেওয়ার পরে আলাউদ্দিন তার সহযোগী আবদুল্লাহ হাসান আল মামুনকে (৩৪) সঙ্গে নিয়ে পাশের আবদুল হাকিমের ধানক্ষেতে নিয়ে যায়। সেখানে পরিকল্পিতভাবে শিশুটিকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয় এবং লাশ ধানক্ষেতে মাটির নিচে পুতে রাখা হয়।
হত্যার তিন দিন পর স্থানীয়রা ধানক্ষেতে একটি শিশুর অর্ধগলিত লাশ দেখতে পান। খবর পেয়ে শিশুটির বাবা আবুল কাশেম ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ শনাক্ত করেন। এই দৃশ্য দেখে এলাকাজুড়ে শোক ও ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। পরে শিশুটির বাবা ৬ এপ্রিল সেনবাগ থানায় চারজনকে সন্দেহভাজন আসামি করে মামলা দায়ের করেন। পুলিশ তদন্তে নেমে দ্রুত ঘটনাটির রহস্য উদঘাটন করে।
তদন্ত চলাকালে আলাউদ্দিন ও তার সহযোগী মামুন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তাদের জবানবন্দিতেই উঠে আসে হত্যার নৃশংস বিবরণ। হত্যার পেছনে পারিবারিক বিরোধই প্রধান কারণ ছিল বলে তদন্তে প্রমাণিত হয়। তদন্ত শেষে পুলিশ দুই আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ, যুক্তিতর্কসহ দীর্ঘ শুনানি শেষে আদালত এ রায় ঘোষণা করেন।
রায়ে আদালত আলাউদ্দিন ও মামুনকে দণ্ডবিধির ৩০২ ও ৩৪ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করেন। আদালতের রায়ে বলা হয়, শিশুহত্যার মতো জঘন্য অপরাধের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের নমনীয়তা দেখানোর সুযোগ নেই; তাই সর্বোচ্চ শাস্তিই বিবেচনা করা হয়েছে।
বিচারক রায় ঘোষণার সময় বলেন,“একজন নিরপরাধ শিশুকে প্রতারণার মাধ্যমে ডেকে এনে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে আসামিরা। এ ধরনের অপরাধ সমাজে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই আইনসম্মত সর্বোচ্চ দণ্ডই প্রদান করা হলো।”
রাষ্ট্রপক্ষের পিপি শাহাদাত হোসেন বলেন,“এ রায়ের মাধ্যমে শিশুহত্যার ঘটনায় ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এটি সমাজে আইনশৃঙ্খলা ও বিচারব্যবস্থার প্রতি জনমানুষের আস্থা বাড়াবে।” তিনি আরও জানান, মামলাটির প্রতিটি ধাপ সতর্কতার সঙ্গে পরিচালনা করা হয়েছে এবং আদালত অপরাধের গুরুতরতা বিবেচনা করেই কঠোর শাস্তি দিয়েছেন।
আসামিপক্ষে আইনজীবী অ্যাডভোকেট মীর হোসেন মামলার শুনানিতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। রায় ঘোষণার পরে তিনি বলেন,“আমরা পূর্ণাঙ্গ রায় হাতে পাওয়ার পর পরবর্তী আইনগত সিদ্ধান্ত নেব।”
Leave a comment