ভারতের জনগণের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। সম্প্রতি হিন্দুস্তান টাইমস-এ প্রকাশিত এক একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি নির্বাসিত জীবনের অভিজ্ঞতা, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা, আসন্ন নির্বাচন এবং বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নিয়ে খোলামেলা মন্তব্য করেছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, “ভারতের জনগণের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা সীমাহীন। তারা আমাকে নিরাপদ আশ্রয় দিয়েছেন। এই মানবিক সহায়তা আর বন্ধুত্ব আমি কখনো ভুলব না।”
২০২৪ সালের আগস্টে তার সরকারের পতনের পর থেকে শেখ হাসিনা ভারতে অবস্থান করছেন। সাক্ষাৎকারে তিনি অভিযোগ করেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ‘উগ্র ও সহিংস নীতির’ পৃষ্ঠপোষকতা করছে, যা বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের জন্য হুমকি তৈরি করছে।
তিনি বলেন, “ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছে। তাদের নীতি দেশের নিরাপত্তা ও সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা বিপন্ন করছে। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা বেড়েছে, রাজধানীর নিরাপত্তাও ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে।”
নির্বাচন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা অভিযোগ করে বলেন , “আওয়ামী লীগকে অংশগ্রহণের সুযোগ না দিয়ে সংবিধান লঙ্ঘন করা হয়েছে। ১৭ কোটি মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এমন নির্বাচন কখনো বৈধ হতে পারে না”। তার দাবি, দল আইনি ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে এই নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাবে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তার বিরুদ্ধে করা মামলাকে ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’ বলে অভিহিত করেন শেখ হাসিনা। তার ভাষায়, “একটি অবৈধ সরকার রাজনৈতিক প্রতিশোধের জন্য এই মামলা সাজিয়েছে। দেশে ন্যায্য বিচার পাওয়ার কোনো পরিবেশ নেই।”
বর্তমান সরকারের নীতির সমালোচনা করে তিনি বলেন, সংখ্যালঘু ও পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে এবং উগ্রবাদীদের প্রশ্রয় দিচ্ছে। “পাকিস্তানের সঙ্গে সামরিক ঘনিষ্ঠতা বাড়ছে, ভারতবিরোধী বক্তব্য প্রচারিত হচ্ছে— যা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য বিপজ্জনক,” মন্তব্য করেন তিনি।
অর্থনীতি নিয়েও তীব্র সমালোচনা করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, “আমাদের সময়ে অর্থনীতি ৪৫০ শতাংশ বেড়েছিল, রপ্তানি ও অবকাঠামো উন্নয়ন রেকর্ড গড়েছিল। এখন IMF প্রবৃদ্ধি কমিয়ে দিয়েছে, যা বর্তমান নীতির ব্যর্থতার প্রতিফলন।”
শেষে তিনি বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, “আমি বিশ্বাস করি, বাংলাদেশ আবারও সংবিধান ও জনগণের শাসনের পথে ফিরবে। ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক রক্তের বন্ধনে গড়া— এই বন্ধন আগামীতেও অটুট থাকবে।”
সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস
Leave a comment