খুলনায় নিজের বাবাকে নির্মমভাবে হত্যার অভিযোগে ছেলে আবু বক্কার সিদ্দিক লিমন (২৮) এবং তার স্ত্রী চাঁদনী (২৪)-কে রাজধানীর পল্লবী এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শুক্রবার (৩ অক্টোবর) দিবাগত রাতে তাদের গ্রেফতার করা হয়। পরে তাদের খুলনার সোনাডাঙ্গা মডেল থানায় নিয়ে যাওয়া হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে ।
সোনাডাঙ্গা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কবির হোসেন শনিবার সকালে গণমাধ্যমকে বলেন, “লিটন খান হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে তার ছেলে লিমন ও পুত্রবধূ চাঁদনীকে পল্লবী থানা এলাকার একটি বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা হত্যার পর পালিয়ে ঢাকায় আশ্রয় নিয়েছিল। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নিহত লিটন খান (৫৫) খুলনার সোনাডাঙ্গা আবাসিক এলাকার সুফিয়া কুটিরে এস এম আরিফ হোসেনের বাড়িতে প্রায় নয় মাস ধরে ভাড়া থাকতেন। পেশায় তিনি ছিলেন একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। স্ত্রী মারা যাওয়ার পর তিনি সেখানে একাই থাকতেন। মাঝে মাঝে ছেলে লিমন ও পুত্রবধূ চাঁদনী তার বাসায় যাতায়াত করতেন।
তদন্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বাবা-ছেলের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে পারিবারিক কলহ চলছিল। আর্থিক লেনদেন, সম্পত্তি ভাগাভাগি এবং পারিবারিক সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রায়ই তাদের মধ্যে বিরোধ দেখা দিত। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, কয়েকবার ঝগড়ার শব্দ শুনে প্রতিবেশীরা লিটন খানকে সতর্ক করেছিলেন।
২ অক্টোবর রাতে লিটন খান নিজ বাসায় একা ছিলেন। পুলিশ প্রাথমিক তদন্তে ধারণা করছে, সেই সুযোগে লিমন ও চাঁদনী বাসায় ঢুকে প্রথমে গলায় ফাঁস দিয়ে তাকে অচেতন করে। পরে মৃত্যু নিশ্চিত করতে ধারালো বটি দিয়ে গলা কেটে হত্যা করা হয়। পরদিন সকালে বাড়িওয়ালা এস এম আরিফ হোসেন ভাড়াটিয়া লিটন খানের দরজা বন্ধ দেখতে পান। দীর্ঘক্ষণ ডাকাডাকির পর কোনো সাড়া না পেয়ে পুলিশে খবর দেন। পুলিশ দরজা ভেঙে প্রবেশ করে লিটনের মরদেহ উদ্ধার করে।
ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লিটন খানের গলায় দাগ ও ধারালো অস্ত্রের ক্ষতচিহ্ন পাওয়া গেছে। তদন্ত কর্মকর্তারা নিশ্চিত হয়েছেন যে এটি পরিকল্পিত হত্যা।
হত্যার পরপরই লিমন ও চাঁদনী বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। পুলিশের একাধিক দল প্রযুক্তির সহায়তায় তাদের অবস্থান শনাক্ত করে। অবশেষে শুক্রবার গভীর রাতে ঢাকার পল্লবী এলাকার একটি ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
ওসি কবির হোসেন বলেন, “ অভিযানের সময় তারা পালানোর চেষ্টা করলেও পুলিশ দ্রুত ঘেরাও করে আটক করে।”
পুলিশ জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে লিমন ও চাঁদনী হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে কিনা তা এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি। তবে তাদের রিমান্ডে নিয়ে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
পুলিশ জানিয়েছে, হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধার এবং অপরাধের পরিকল্পনা কোথায় ও কীভাবে করা হয়েছিল—সে বিষয়ে তদন্ত চলছে। এ ঘটনায় সোনাডাঙ্গা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) তানভীর হাসান জানান, “এটি অত্যন্ত নৃশংস ও শোকাবহ ঘটনা। আমরা দ্রুততম সময়ে চার্জশিট দাখিলের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি। হত্যার সঙ্গে অন্য কেউ জড়িত থাকলে তাকেও আইনের আওতায় আনা হবে।”
Leave a comment