ভাষা সৈনিক, লেখক ও রবীন্দ্রবিশেষজ্ঞ আহমদ রফিকের ৯৭তম জন্মদিন কেটেছে হাসপাতালের আইসিইউ শয্যায়। বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকার পান্থপথের হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালে তাঁর জন্মদিন পার হয়, যেখানে তিনি চিকিৎসাধীন রয়েছেন। পরিবারের বাইরে এমন নিঃসঙ্গ জন্মদিন তাঁর জীবনে প্রথম।
গত বুধবার তাঁকে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতাল থেকে স্থানান্তর করা হয় হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালে। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, তাঁর অবস্থার তেমন পরিবর্তন হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে শারীরিক দুর্বলতা, কিডনি জটিলতা, ডায়াবেটিস, হৃদ্রোগ, পারকিনসনস্, অ্যালঝেইমারসসহ নানা বয়সজনিত রোগে ভুগছেন তিনি। চিকিৎসক ডা. লেলিন চৌধুরীর ভাষায়, আহমদ রফিক প্রায় সারাক্ষণ তন্দ্রাচ্ছন্ন থাকেন, তবে সাড়া দিতে পারেন।
১৯২৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শাহবাজপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন আহমদ রফিক। চিকিৎসক হলেও মূলত লেখক ও গবেষক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। জীবদ্দশায় তিনি শতাধিক বই লিখেছেন ও সম্পাদনা করেছেন। ১৯৫৮ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম গবেষণাধর্মী প্রবন্ধগ্রন্থ। বাংলা একাডেমির ফেলো, এশিয়াটিক সোসাইটির জীবন সদস্য এবং রবীন্দ্রচর্চা কেন্দ্র ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি।
বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদক, অগ্রণী ব্যাংক শিল্পসাহিত্য পুরস্কারসহ বহু সম্মাননা। ১৯৯৭ সালে কলকাতার টেগোর রিসার্চ ইনস্টিটিউট তাঁকে ‘রবীন্দ্রতত্ত্বাচার্য’ উপাধিতে ভূষিত করে।
পরিবারের সদস্যহীন এই লেখক জীবনের শেষ প্রহরে প্রায় দৃষ্টিশক্তিহীন, চলনশক্তিহীন হয়ে পড়েছেন। কয়েক বছর আগে পর্যন্ত তিনি নতুন বই রচনায় সক্রিয় ছিলেন। শেষবারের মতো একটি উপন্যাস লেখাও শেষ করেছিলেন, যদিও সম্পাদনা করে প্রকাশ করতে পারেননি।
২০০৬ সালে স্ত্রীকে হারানোর পর থেকেই একাকী জীবন কাটাচ্ছেন আহমদ রফিক। ব্যক্তিগত সহকারী ও কয়েকজন ঘনিষ্ঠ মানুষ ছাড়া তাঁর পাশে আর কেউ নেই। অথচ একসময় বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতিচর্চায় তিনি ছিলেন প্রভাবশালী কণ্ঠস্বর। ৯৭তম জন্মদিন তাই হয়ে উঠেছে নিঃসঙ্গতা ও হাসপাতালের শয্যায় কাটানো এক দীর্ঘশ্বাসের দিন।

Leave a comment