বাংলার লোকসঙ্গীতের এক অমর কণ্ঠ, ফরিদা পারভীন, শনিবার রাত ১০টা ১৫ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭১। খবরটি নিশ্চিত করেছেন ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশীষ কুমার চক্রবর্তী। তিনি স্ত্রী ও চার সন্তান রেখে গেছেন।
দীর্ঘদিন কিডনি জটিলতায় ভুগছিলেন ফরিদা পারভীন। সপ্তাহে দুই দিন ডায়ালাইসিস করানো হতো। ২ সেপ্টেম্বর মহাখালীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। নিয়মিত ডায়ালাইসিসের পর শারীরিক অবস্থা আরও খারাপ হওয়ায় চিকিৎসকরা তাকে আইসিইউতে ভর্তি করেন। শেষ পর্যন্ত অবস্থার অবনতি হলে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়। চিকিৎসকদের সব চেষ্টার পর তিনি না ফেরার দেশে চলে যান।
১৯৫৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর নাটোরের সিংড়া থানায় জন্ম নেওয়া ফরিদা পারভীন গানের জগতে পা রাখেন পারিবারিক সূত্রেই। বাবার গানপ্রেম ও দাদার সংগীত প্রভাব তাঁকে প্রভাবিত করে। শৈশবে মাগুরায় ওস্তাদ কমল চক্রবর্তীর কাছে সংগীতের হাতেখড়ি নেন। ১৯৬৮ সালে মাত্র ১৪ বছর বয়সে পেশাদার সংগীতজীবন শুরু করেন।
শুরুর দিকে নজরুলসংগীত ও আধুনিক গান গেয়ে পরিচিতি পেলেও জীবনভর তিনি লালন সাঁইয়ের গান গেয়ে খ্যাতি অর্জন করেন। লালনসংগীতের আধ্যাত্মিকতা ও দর্শন তাঁকে মুগ্ধ করেছিল। তিনি মকছেদ আলী সাঁইসহ বিভিন্ন লালনশিল্পীর কাছ থেকে তালিম নিয়েছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ঢাকায় এসে তিনি লালনগীতি রেকর্ড ও পরিবেশনায় নিবেদিত ছিলেন।
ফরিদা পারভীনের অবদানের জন্য ১৯৮৭ সালে বাংলাদেশ সরকারের একুশে পদক লাভ করেন। ১৯৯৩ সালে ‘অন্ধ প্রেম’ চলচ্চিত্রের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। ২০০৮ সালে জাপানের ফুকুওয়াকা পুরস্কার লাভ করেন। তাঁর কণ্ঠে বাংলা লোকগান শুধু বাংলাদেশে নয়, জাপান, সুইডেন, ডেনমার্ক, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ বিশ্ব দরবারে সমাদৃত হয়েছে।
ফরিদা পারভীনের দীর্ঘ ৫৫ বছরের সংগীতজীবন বাংলা গানের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি লালনসংগীতকে নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়ায় বিশেষ পরিচিত ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে বাংলা সংগীতমহল ও ভক্তসমাজ শোকাহত।
Leave a comment