সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলায় ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে সাত বছরের শিশু ছোঁয়া মনিকে হত্যা করেছে তারই ফুফাতো ভাই মনিরুল ইসলাম জিহাদ (২২)। শনিবার (২৩ আগস্ট) বিকেলে আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে অভিযুক্ত এ কথা স্বীকার করেছে। আদালত তার স্বীকারোক্তি রেকর্ড করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
বুধবার (২০ আগস্ট) সকালে ঘটনার সূত্রপাত হয়েছে । রায়গঞ্জ উপজেলার পাঙ্গাসী ইউনিয়নের মিরের দেউলমোড়া গ্রামের সুমন সেখের মেয়ে ছোঁয়া মনি সকাল ১০টার দিকে হঠাৎ নিখোঁজ হয়। পরিবারের খোঁজাখুঁজির পরেও তাকে পাওয়া যাচ্ছিল না।
অভিযুক্ত জিহাদ, ওই গ্রামেই মামার বাড়িতে থাকত, তখন গ্রামের মসজিদের মাইকে শিশুটির নিখোঁজ হওয়ার সংবাদ প্রচার করে। কিন্তু দুপুর ১২টার দিকে বাড়ির পাশের একটি পরিত্যক্ত টয়লেট থেকে ছোঁয়া মনির মরদেহ উদ্ধার হয়। চিকিৎসকরা জানান, শিশুটিকে মুখ, মাথা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করা হয়েছিল। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়, ধর্ষণের পর তাকে হত্যা করা হয়েছে।
মরদেহ উদ্ধারের পরপরই জিহাদ বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। ওই রাতে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ‘মায়ের পরকীয়ার বলি হলো শিশু’ শিরোনামে একটি স্ট্যাটাস দিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করে। এ ঘটনায় শিশুটির দাদি ফিরোজা খাতুন বাদী হয়ে রায়গঞ্জ থানায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
ডিবি পুলিশের অভিযানে শুক্রবার (২২ আগস্ট) রাতে গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে মনিরুল ইসলাম জিহাদকে গ্রেফতার করা হয়। শনিবার (২৩ আগস্ট) বিকেলে সিরাজগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করলে সে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেয়।
জবানবন্দিতে জিহাদ আদালতকে জানান, তিনি মামাতো বোন ছোঁয়া মনিকে পরিত্যক্ত টয়লেটে নিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। কিন্তু ছোঁয়া মনি বিষয়টি পরিবারের সদস্যদের জানিয়ে দেওয়ার হুমকি দিলে ভয় পেয়ে তাকে হত্যা করেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও ডিবি পুলিশের এসআই নাজমুল হক বলেন, “গ্রেফতারের পর জিহাদ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অপরাধ স্বীকার করে। পরে আদালতে সে বিস্তারিত জবানবন্দি দেয়। আদালতের নির্দেশে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।”
এই নৃশংস ঘটনায় গ্রামজুড়ে নেমে এসেছে শোক ও ক্ষোভ। প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, ছোঁয়া মনি ছিল প্রাণবন্ত ও চঞ্চল শিশু। একজন প্রতিবেশী বলেন, “এটা কল্পনাতীত। যে আপন ভাইয়ের মতো ছিল, সেই এভাবে হত্যা করবে—কেউ ভাবতেও পারেনি।”
Leave a comment