রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকাগুলোর একটি ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বৃহস্পতিবার দিবাগত মধ্যরাতে ঘটেছে এক অভাবনীয় ও চাঞ্চল্যকর ছিনতাইয়ের ঘটনা। সিসিটিভি বা প্রত্যক্ষদর্শীর মাধ্যমে নয়, সরাসরি মোবাইল ক্যামেরায় ধারণ করা একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে—এক ব্যক্তি চাপাতির ভয় দেখিয়ে অন্য এক যুবকের কাছ থেকে ব্যাগ ছিনিয়ে নির্বিঘ্নে পুলিশের সামনে দিয়ে হেঁটে চলে যাচ্ছেন। ঘটনাস্থলের আশপাশে তিনজন পুলিশ সদস্য থাকলেও তারা ছিলেন নিষ্ক্রিয়।
ভিডিওটি শুক্রবার সন্ধ্যার পর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। এতে দেখা যায়, এক ব্যক্তি প্রিন্টের শার্ট ও কালো প্যান্ট পরে রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁর হাতে বড় একটি চাপাতি। সামনে থাকা সাদা শার্ট ও জিনস পরা এক তরুণকে ভয় দেখিয়ে তিনি ব্যাগ ছিনিয়ে নেন। এরপর রাস্তা পার হয়ে নির্দ্বিধায় এলাকা ত্যাগ করেন। আশপাশে ছিলেন সাধারণ পথচারীরাও, কিন্তু কেউ কিছু বলেননি বা প্রতিবাদ করেননি।
সবচেয়ে বিস্ময়ের বিষয়, ভিডিওতে যে তিনজন পুলিশ সদস্যকে দেখা যায়—দুজন পোশাকধারী ট্রাফিক পুলিশ ও একজন সাদাপোশাকে—তারা ঘটনাটিকে প্রতিহত করার কোনো উদ্যোগ নেননি।
স্থানীয় সূত্র ও ভিডিও বিশ্লেষণে জানা যায়, ঘটনাটি ঘটেছে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর রাসেল স্কয়ারের সামনে, নিউ মডেল বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের বিপরীত পাশে।
ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ক্যাশৈন্যু মারমা জানান, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টার পর এই ঘটনা ঘটে। তবে এখনো ছিনতাইয়ের শিকার ব্যক্তির কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। ভিডিওটি হাতে পাওয়ার পর তদন্ত শুরু হয়েছে এবং ছিনতাইকারীকে শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।
তিনি আরও বলেন, রাতে রাসেল স্কয়ার মোড়ে সাধারণত অনেক ট্রাক ও নৈশকোচ থাকে। সে সময় ট্রাফিক পুলিশ সেগুলোর নিয়ন্ত্রণেই ব্যস্ত ছিলেন। তাই ঘটনাটি চোখের আড়ালে থেকে যেতে পারে।
এদিকে পুলিশের ধানমন্ডি অঞ্চলের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার শাহ মোস্তফা তারিকুজ্জামান জানান, ভিডিও ফুটেজের ভিত্তিতে ছিনতাইকারীকে শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে এবং অচিরেই তাকে আটক করা সম্ভব হবে বলে তারা আশাবাদী।
ঢাকায় এ ধরনের ভয়াবহ ঘটনা এই প্রথম নয়। মাত্র এক সপ্তাহ আগে, ১১ জুলাই ভোরে শ্যামলী ২ নম্বর সড়কে চাপাতি হাতে ছিনতাইয়ের আরেকটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল। ওই ঘটনায় শিমিয়ন ত্রিপুরা নামের এক যুবকের মানিব্যাগ, মোবাইল ও জামাকাপড় কেড়ে নেয় তিন মোটরসাইকেল আরোহী। পরবর্তীতে সেই ঘটনায় জড়িত তিনজনকে গোয়েন্দা পুলিশ গ্রেপ্তার করে।
রাজধানীতে একের পর এক এমন ছিনতাইয়ের ঘটনায় নগরবাসীর মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাধারণ মানুষ প্রশ্ন তুলেছেন—প্রতিনিয়ত পুলিশের উপস্থিতিতেই যদি অপরাধীরা এমন সাহস দেখায়, তবে নিরাপত্তা কোথায়?
Leave a comment