চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে চলমান ছাত্র-জনতার প্রতিরোধ আন্দোলনকে ‘মব’ বা উচ্ছৃঙ্খল জনতা আখ্যা দেওয়াকে ‘ফ্যাসিস্টদের সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র’ হিসেবে অভিহিত করেছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। সংগঠনটি বলেছে, জনগণের বিক্ষোভ ও গণপ্রতিরোধকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে হেয় করা হচ্ছে, যা আসলে একটি বৃহৎ রাজনৈতিক ও আদর্শিক ষড়যন্ত্রের অংশ। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে এই আন্দোলন চলবে যতক্ষণ না তা সম্পূর্ণভাবে নির্মূল হয়।
আজ শুক্রবার সংগঠনের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক লিখিত বিবৃতিতে এই বক্তব্য তুলে ধরেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক। বিবৃতিতে তিনি অভিযোগ করেন, অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পরও এখনো শেখ হাসিনার সময়কার বহু ‘অবিচারকারী ও ফ্যাসিবাদী সহচর’ গ্রেপ্তার হয়নি। এতে জনগণের ক্ষোভ যেমন বাড়ছে, তেমনি আন্দোলনের প্রাসঙ্গিকতা আরও জোরালো হচ্ছে।
মাওলানা আজিজুল হক বলেন, “জুলাইয়ের ছাত্র-জনতার বিপ্লব এখনো অসমাপ্ত। যারা নতুন করে ক্ষমতার ছায়ায় ফ্যাসিবাদের পুনরুত্থানের চেষ্টা করছে, তারা যেন জানে—ছাত্র-জনতা এবার প্রস্তুত। সরকার যেখানে ব্যর্থ, প্রশাসন যেখানে নিরুত্তর, সেখানেই জনতার হাতে গড়ে উঠছে নতুন প্রতিরোধের ব্যারিকেড।”
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ছাত্র-জনতার চলমান প্রতিরোধে বিভ্রান্তি ও বিভাজন সৃষ্টির জন্য সচেতনভাবে ‘মব’ শব্দটি ব্যবহার করা হচ্ছে, যা দেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রকামী জনগণের প্রতি চরম অবমাননাকর। এই শব্দের মাধ্যমে আন্দোলনকে সহিংস এবং অপরাধমূলক রূপে তুলে ধরার চেষ্টা করা হচ্ছে, যাতে জনসমর্থন দুর্বল হয় এবং দমন-পীড়নের পথ সুগম হয়।
হেফাজতের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, “এই দেশে যাদের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতা রাস্তায় নেমেছে, তারা গণবিচ্ছিন্ন, ইতিহাসবিচ্যুত এবং নৈতিকভাবে পরাজিত। তাদের রক্ষায় যারা ‘মব’ শব্দ ব্যবহার করছে, তারা আসলে জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।”
মাওলানা আজিজুল হক বলেন, “চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান একদিকে যেমন একনায়কতন্ত্রের পতনের দিকনির্দেশনা দিয়েছিল, তেমনি তা ছিল ভবিষ্যতের ফ্যাসিবাদের জন্য এক অশনিসংকেত। এখন এই বিপ্লবের সুর ধরে এগিয়ে যাওয়াটাই সময়ের দাবি। এই আন্দোলন কোনো ব্যক্তিকেন্দ্রিক নয়, এটি একটি আদর্শিক লড়াই—ফ্যাসিবাদের শেকড় উপড়ে ফেলার লড়াই।”
বিবৃতিতে হেফাজতে ইসলাম ছাত্র-জনতাকে ‘সব বিভেদ-বিভাজন ভুলে’ একত্র হওয়ার আহ্বান জানায়। বলা হয়, “আজকের দিনে রাজনৈতিক মতাদর্শ বা দলীয় পরিচয়ের ঊর্ধ্বে উঠে সবাইকে এক কাতারে দাঁড়াতে হবে। যারা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে, গণঅধিকার ও ধর্মীয় স্বাধীনতার পক্ষে, তাদের সবাইকে এই ঐক্যে শামিল হতে হবে। জুলাই বিপ্লবের চেতনা যেন কেউ ম্লান করতে না পারে, সে জন্য ঐক্যই হচ্ছে প্রধান অস্ত্র।”
সংগঠনটি সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলে, “তথাকথিত শান্তি ও স্থিতিশীলতার নামে গণআন্দোলনের কণ্ঠরোধ করা যাবে না। ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তিগুলোকে সহিংসতাবিরোধী ও গণতান্ত্রিক রাজনীতির সুযোগ দিতে হবে। অন্যথায় দেশে নতুন সংকট তৈরি হবে।”
হেফাজতের বিবৃতির শেষ অংশে বলা হয়, সারা দেশে এখন যে গণপ্রতিরোধ চলছে, তা আসলে দীর্ঘ সময়ের জমে থাকা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। ক্ষমতার আসনে পরিবর্তন এলেও যদি কাঠামোগত ফ্যাসিবাদ অক্ষুণ্ন থাকে, তবে সেই পরিবর্তন অর্থহীন। তাই সংগঠনটি ঘোষণা দেয়—“ফ্যাসিবাদ নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত ছাত্র-জনতার গণপ্রতিরোধ থামবে না। এটি একদিনের ক্ষোভ নয়, এটি ইতিহাসের দাবি।”
সূত্র: হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, ঢাকা।
Leave a comment