অভিনেত্রী নুসরাত ফারিয়াকে গ্রেপ্তার ও কারাগারে পাঠানোর ঘটনাকে ‘বিচার প্রক্রিয়াকে প্রহসনে পরিণত করা’র একটি দৃষ্টান্ত হিসেবে অভিহিত করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটির দাবি, জুলাই গণহত্যার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ব্যক্তিদের বাদ দিয়ে এভাবে ঢালাওভাবে মামলায় গ্রেপ্তার ও জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠানো বিচার ব্যবস্থাকে অকার্যকর ও বিতর্কিত করে তুলছে।
আজ সোমবার (১৯ মে) গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই অবস্থান জানায় এনসিপি। দলের পক্ষে বিজ্ঞপ্তিটি পাঠান এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব (দপ্তর) সালেহ উদ্দিন সিফাত।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকার ভাটারা থানায় দায়ের করা একটি হত্যাচেষ্টা মামলায় গতকাল রোববার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে অভিনেত্রী নুসরাত ফারিয়াকে গ্রেপ্তার করে ইমিগ্রেশন পুলিশ। পরে আজ সোমবার তাঁকে আদালতে হাজির করলে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এনসিপির ভাষ্য অনুযায়ী, এই ঘটনা প্রমাণ করে যে, বিচার ব্যবস্থার নামে লোক দেখানো ও রাজনৈতিক প্রভাবিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ চলছে।
দলটি আরও অভিযোগ করে, “একদিকে নুসরাত ফারিয়াকে দ্রুত গ্রেপ্তার ও কারাগারে পাঠানো হচ্ছে, অথচ অপরদিকে জুলাই অভ্যুত্থানে গুলিবর্ষণ ও হামলায় অভিযুক্ত সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ চলতি মাসেই কোনো ধরনের বাধা ছাড়াই দেশত্যাগ করেছেন। ঘটনার পর সেনানিবাসে আশ্রিত ৬২৬ জন ব্যক্তির পরিচয় আজও প্রকাশিত হয়নি। অথচ এসব বিষয় নিয়ে প্রশাসনের কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেই।”
এনসিপির মতে, বিচারপ্রক্রিয়াকে বিভ্রান্ত করতে রাষ্ট্রের ভেতর থেকে কিছু পক্ষ সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। এদের উদ্দেশ্য হলো—জুলাই গণহত্যার প্রকৃত বিচারকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা এবং প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করা। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “বিদ্যমান রাষ্ট্র কাঠামো ও প্রশাসনের ভেতরে থাকা একটি মহল অন্তর্ঘাতমূলক নীলনকশা বাস্তবায়ন করছে, যাতে ‘জুলাই গণহত্যা’ এবং এর বিচার কার্যক্রম চিরতরে প্রশ্নবিদ্ধ হয়।”
বিচার প্রক্রিয়ায় ধীরগতি নিয়েও হতাশা প্রকাশ করেছে এনসিপি। তারা জানায়, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–২ গঠনের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হলেও এখনো কোনো সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি হয়নি। ফলে বিচার কার্যক্রমের কোনো বাস্তব অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না।
বিজ্ঞপ্তিতে এনসিপি জানায়, “আমরা আগামী জুলাই মাসের মধ্যেই এই গণহত্যার বিচার কার্যক্রমে দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখতে চাই। সেই লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আশু ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানাই।”
এনসিপি একইসঙ্গে হরহামেশা মামলা দায়ের এবং মামলা–বাণিজ্যের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি মামলা গ্রহণে সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছে। তারা বলেছে, “এই দেশে যারা সত্যিকার অর্থে জনগণের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত, তাদেরকে বাদ দিয়ে সাধারণ মানুষ, শিল্পী বা কর্মীদের হয়রানি করে মূল বিচার কার্যক্রমকে প্রশ্নবিদ্ধ করা যায় না।”
Leave a comment