অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের নবম মাসে, আজ প্রথমবার নিজ জন্মভূমি চট্টগ্রামে যাচ্ছেন। সেখানে তিনি দিনব্যাপী বেশ কয়েকটি কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করবেন বলে জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়।
নির্ধারিত বেশ কয়েকটি কর্মসূচির মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) পঞ্চম সমাবর্তনে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগদান করবেন। পাশাপাশি তার পৈতৃক বাড়ি হাটহাজারী উপজেলার শিকারপুর ইউনিয়নের বাথুয়া গ্রামও পরিদর্শন করবেন। এ ছাড়া অধ্যাপক ইউনূস চট্টগ্রামে পৌঁছানোর পর বন্দর পরিদর্শন করবেন এবং বন্দরের অভ্যন্তরে এনসিটি-৫ প্রাঙ্গণে একটি সভায় অংশ নেবেন। এরপর প্রধান উপদেষ্টা বন্দর ও জাহাজ চলাচল খাতের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বন্দর ব্যবহারকারী বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধি ও বাণিজ্য সংস্থার নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন।
চট্টগ্রামের সন্তান হওয়ায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এ সফর আলাদা গুরুত্ব বহন করছে। নিজেদের সন্তানকে বরণ করতে পুরোপুরি প্রস্তুত চট্টগ্রাম।
চট্টগ্রাম সফরকালে অনেকগুলো নির্ধারিত কর্মসূচি থাকলেও মূলত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন উৎসবে যোগদানই তার প্রধান কর্মসূচি। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পঞ্চম সমাবর্তন। প্রায় সাড়ে ২২ হাজার গ্র্যাজুয়েট এবারের সমাবর্তনে অংশ নিচ্ছেন। একসময় এ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন আজকের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস। সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সম্মানসূচক ডি-লিট ডিগ্রি দেওয়া হবে তাকে। এ উপলক্ষে সাজ সাজ রব পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয় জুড়ে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছেই হাটহাজারী উপজেলার শিকারপুর ইউনিয়নের বাথুয়া গ্রামের বাড়ি গিয়ে দাদা-দাদির কবর জিয়ারত করবেন ড. ইউনূস। একই সঙ্গে সেখানে আত্মীয়স্বজন ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করবেন। দেড় যুগ পর পৈতৃক গৃহাঙ্গনে যাচ্ছেন তিনি। সেখানে তাকে স্বাগত জানাতে স্থানীয়ভাবে নেওয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, বুধবার সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামবেন। সেখান থেকে তিনি সরাসরি চট্টগ্রাম বন্দরে যাবেন। বন্দর সূত্র জানায়, প্রধান উপদেষ্টাকে বন্দরের সক্ষমতা, চলমান কার্যক্রম, ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা, বে টার্মিনাল প্রকল্প, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরসহ চলমান ও প্রস্তাবিত বিভিন্ন প্রকল্পের বিষয়ে মাল্টিমিডিয়া প্রেজেন্টেশন দেওয়া হবে।
বন্দর থেকে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে যাবেন তিনি এবং কালুরঘাট রেল সেতুর ভিত্তি প্রস্তর উন্মোচন করবেন। বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্র জানায়, ১১ হাজার ৫৬০ কোটি ৭৬ লাখ টাকা ব্যয়ে এ সেতুর নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন থাকবে ৪ হাজার ৪৩৫ কোটি ৬৩ লাখ এবং বিদেশি ঋণ ৭ হাজার ১২৫ কোটি ১৪ লাখ টাকা। চট্টগ্রাম নগরীর সঙ্গে বোয়ালখালী উপজেলা ও পটিয়া উপজেলার একাংশের যোগাযোগের অন্যতম প্রধান মাধ্যম এ সেতুর জন্য দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছিলেন স্থানীয় অধিবাসীরা।
কালুরঘাট সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর উন্মোচন শেষে প্রধান উপদেষ্টা চট্টগ্রাম মহানগরীর জলাবদ্ধতা ও হাটহাজারী সড়ক উন্নয়ন বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন এবং চট্টগ্রাম হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালের জন্য জমি বরাদ্দের দলিল হস্তান্তর করবেন।
দুপুর ২টায় তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন এবং বিকেল ৫টায় বাথুয়া গ্রামের বাড়িতে যাবেন। এদিন সন্ধ্যা ৭টায় প্রধান উপদেষ্টা শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমানযোগে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেবেন।
এদিকে, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ও জেলা পুলিশ প্রধান উপদেষ্টা চট্টগ্রাম সফর উপলক্ষে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। প্রধান উপদেষ্টার যাতায়াত পথ ও কর্মসূচি স্থলসমূহ নিরাপত্তা চাদরে ঢেকে ফেলা হচ্ছে।
Leave a comment