ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সাম্প্রতিক সামরিক উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে এশিয়া-ইউরোপ আকাশপথে এক অপ্রত্যাশিত বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়েছে। বুধবার তাইওয়ানের চায়না এয়ারলাইনস, দক্ষিণ কোরিয়ার কোরিয়ান এয়ারসহ বেশ কয়েকটি এশীয় বিমান সংস্থা ঘোষণা করেছে যে, তারা ইউরোপগামী এবং ইউরোপফেরত বহু ফ্লাইট বাতিল অথবা রুট পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছে। পাকিস্তানে ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জেরে নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগে দুই দেশের বেশ কিছু বিমানবন্দর সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে গেছে, যা বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যিক ফ্লাইট চলাচলে সরাসরি প্রভাব ফেলছে।
বিষয়টির সূত্রপাত হয় গত মাসে, যখন ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ইসলামপন্থী জঙ্গিদের হামলায় অন্তত ২৬ জন নিহত হন। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ভারত পাকিস্তান ও পাকিস্তানশাসিত কাশ্মীরের ওপর হামলা চালায় বলে খবর পাওয়া গেছে। পাল্টা প্রতিরোধ হিসেবে পাকিস্তান দাবি করেছে, তারা ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান গুলি করে ভূপাতিত করেছে। দুই দেশের এই সামরিক পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপের মধ্যেই আকাশসীমার ওপর নিয়ন্ত্রণ কড়াকড়ি হয়, যা বেসামরিক বিমান পরিবহন খাতে তাৎক্ষণিক প্রভাব ফেলে।
এ অবস্থায় ওমান, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কুয়েতের আকাশে ফ্লাইট ট্র্যাকিং ওয়েবসাইটগুলোতে ঘনঘন ফ্লাইট চলাচল লক্ষ্য করা গেছে, যা মধ্যপ্রাচ্যের আকাশপথে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী দপ্তর এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ভারতের এ ধরনের হামলা উপসাগরীয় দেশগুলোর বাণিজ্যিক ফ্লাইটের জন্য ‘গভীর ঝুঁকি’ এবং সাধারণ মানুষের জীবন ‘বিপন্ন’ করছে। পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ জানায়, হামলার সময় পাকিস্তানের আকাশসীমায় অন্তত ৫৭টি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চলছিল।
এই উত্তেজনার প্রেক্ষিতে ভারতের বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয় এখনো কোনো মন্তব্য না করলেও, ইতিমধ্যে দুই দেশই একে অপরের বিমান সংস্থার জন্য আকাশসীমা বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে লুফথানসার মতো শীর্ষ আন্তর্জাতিক বিমান সংস্থাগুলো পাকিস্তানের আকাশসীমা এড়িয়ে চলতে বাধ্য হচ্ছে।
অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট চলাচলেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ভারতের ইন্ডিগো বিমান সংস্থা জানিয়েছে, বুধবার সকাল পর্যন্ত তারা ১৬৫টি ফ্লাইট বাতিল করেছে, যার প্রভাবে কোম্পানিটির শেয়ারমূল্য কমেছে ১.১ শতাংশ। এ ছাড়া এয়ার ইন্ডিয়া, স্পাইসজেট ও আকাসা এয়ারের একাধিক ফ্লাইট বাতিল হয়েছে ভারতজুড়ে বিমানবন্দর আংশিক বন্ধ থাকায়।
ফ্লাইটরাডার২৪ অনুসারে, ভারতের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও পাকিস্তানের আকাশে এখন খুবই সীমিত সংখ্যক বেসামরিক ফ্লাইট দেখা যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে কেএলএম ঘোষণা করেছে, তারা পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত পাকিস্তানের আকাশসীমা ব্যবহার করবে না। একইসঙ্গে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনসও ৬ মে থেকে পাকিস্তানের ওপর দিয়ে ফ্লাইট চলাচল বন্ধ রেখেছে।
আকাশপথের নিরাপদ বিকল্প হিসেবে কোরিয়ান এয়ার সিউল-ইনচন থেকে দুবাইগামী রুটটি ঘুরিয়ে মিয়ানমার, বাংলাদেশ ও ভারতের দক্ষিণাংশ দিয়ে চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
Leave a comment