Home আন্তর্জাতিক কাশ্মীর সীমান্তে উত্তেজনায় বাংকার নির্মাণে ব্যস্ত জনগণ
আন্তর্জাতিক

কাশ্মীর সীমান্তে উত্তেজনায় বাংকার নির্মাণে ব্যস্ত জনগণ

Share
Share


কাশ্মীর উপত্যকার নিয়ন্ত্রণরেখা ঘেঁষে দুই দেশের সেনাবাহিনীর টানটান উত্তেজনার মধ্যে নতুন করে বেঁচে থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছেন সাধারণ মানুষ। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতির শর্ত ভঙ্গ করে সাম্প্রতিক গুলিবিনিময়ের ঘটনায় সীমান্তবর্তী এলাকা জুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। সেই আতঙ্কেই পাকিস্তান ও ভারত–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের মানুষ পুরনো বাংকার পরিষ্কার করছেন, কেউ কেউ আবার নতুন বাংকার বানিয়ে নিচ্ছেন।

পাকিস্তান–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের চাকোঠিতে ফায়জান এনায়েত নামের এক বাসিন্দা এখন নিয়মিত যাচ্ছেন তাঁদের পারিবারিক বাংকারে। একসময় যেখানে পুরনো আসবাবপত্র রাখা হতো, এখন সেটাই রক্ষা কবচ হয়ে উঠছে।

কাশ্মীরের পেহেলগামে এক সশস্ত্র হামলার জেরে দুই দেশের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সীমান্ত বরাবর শুরু হয় গোলাগুলি। গত সপ্তাহে ভারতীয় কাশ্মীরের উরি সেক্টরের তুতমার গলি পোস্ট ও পাকিস্তানি লিপা সেক্টরের নিয়ন্ত্রণরেখায় মাঝরাত থেকে ভোর অবধি গুলি বিনিময় চলে। এতে বেসামরিক হতাহতের খবর না থাকলেও আতঙ্ক চরমে পৌঁছায়।

পাকিস্তান–নিয়ন্ত্রিত লিপা উপত্যকার আইনজীবী এহসান-উল-হক শামির অভিজ্ঞতা বলছে, ২০১৯ সালে তাঁর বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল ভারতীয় সেনার গুলিতে। একই রকম ঘটনা ঘটেছিল ২০০২ ও ১৯৯৮ সালেও। এবারও তিনি রাতের বেলায় বৃদ্ধা মাকে বাংকারে সরিয়ে নিতে বাধ্য হন।

এদিকে, ভারতের কুপওয়ারা, বারামুল্লা কিংবা উরি সেক্টরের গ্রামগুলোতেও মানুষ নিজের খরচে ভূগর্ভস্থ বাংকার বানাচ্ছেন। পীরজাদা সৈয়দ নামের এক বাসিন্দা বলেন, “আল্লাহ করুন যেন কিছু না হয়। কিন্তু দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে যে কোনো সময় কিছু একটা ঘটতে পারে। আমরা সেই ভয় থেকেই বাংকার করছি।”

কারনাহ, টোড কিংবা ভাটগ্রান গ্রামের মতো সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে রাতভর ঘুমাতে পারছেন না মানুষ। গোলাগুলির শব্দে জেগে থাকেন তাঁরা। ছোট ছোট শিশুদের সঙ্গে মায়েরা, বৃদ্ধারা—all বাংকারে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন।

উরি সেক্টরের বাসিন্দারা অভিযোগ করছেন, সরকারের অর্থায়নে নির্মিত বাংকারগুলোতে নেই কোনো বিদ্যুৎ কিংবা পানি। দরিদ্রদের জন্য এসব বাংকারও ব্যবহারযোগ্য নয়।

বিপরীতে, পাকিস্তান–নিয়ন্ত্রিত লিপা উপত্যকার পরিস্থিতি তুলনামূলক শান্ত। খাদ্য ও অন্যান্য জিনিসপত্রের সঙ্কট না থাকায় সেখানকার মানুষ এলাকা ছেড়ে যাননি। যদিও পুরুষেরা এলাকায় থেকে গেলেও নারী ও অসুস্থদের অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

তবে বড় দুশ্চিন্তা হলো পর্যটন শিল্প। ২০২২ সালের রাস্তা সংস্কারের পর লিপায় বেড়েছিল পর্যটক আগমন। অন্তত ৩০টির মতো হোটেল-গেস্টহাউস তৈরি হয়েছিল। এখন গোলাগুলির কারণে সেই পর্যটকরা আর আসবেন না বলেই আশঙ্কা স্থানীয়দের।

সীমান্ত উত্তেজনার এই ধারা নতুন নয়। ২০০৩ সালে দুই দেশ যুদ্ধবিরতির চুক্তি করলেও তা বহুবার লঙ্ঘিত হয়েছে। ২০২১ সালে যুদ্ধবিরতির নতুন চুক্তি হলেও পেহেলগামের সাম্প্রতিক ঘটনার পর সেটিও কার্যত ভেঙে পড়েছে।

কাশ্মীরের মানুষ যুদ্ধ চায় না। তাঁরা চায় শান্তি, স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। কিন্তু গোলার শব্দে, বাংকারের অন্ধকারে আর প্রতিদিনের উদ্বেগে তাঁদের দিন কাটছে বেঁচে থাকার লড়াইয়ে।

এই লড়াইয়ে অস্ত্র নেই তাঁদের হাতে—আছে শুধু প্রাচীন ভয় আর সেই ভয় মোকাবিলার ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা, যার নাম ‘বাংকার’।

 

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Don't Miss

সরকারপ্রধান হিসেবে প্রথমবার চট্টগ্রাম পৌঁছেছেন ড. ইউনূস

অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে প্রথমবারের মতো নিজ জেলা চট্টগ্রাম সফর করছেন  । এরই মধ্যে চট্টগ্রামে পৌঁছে গেছেন তিনি। বুধবার (১৪...

সৌদি আরবের সঙ্গে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ‘অস্ত্র বিক্রির চুক্তি’ করেছে যুক্তরাষ্ট্র

প্রায় ১৪২ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র চুক্তি হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সৌদি আরবের মধ্যে। রিয়াদে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত সৌদি-মার্কিন বিনিয়োগ ফোরামে...

Related Articles

পিএসএলে খেলবেন সাকিব!

দীর্ঘ বিরতির পর প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে ফিরছেন সাকিব আল হাসান। পাকিস্তান সুপার লিগের...

বন্যা মোকাবিলায় বিশ্বব্যাংক ২৭০ মিলিয়ন ডলার দিচ্ছে বাংলাদেশকে। 

বাংলাদেশকে, ২০২৪ সালের আগস্টে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো, কৃষি ও জীবিকায় পুনরুদ্ধার এবং...

‘পাকিস্তানের থেকে পরমাণু অস্ত্র নিয়ে নেওয়া উচিত’

ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, পাকিস্তানের কাছ থেকে পরমাণু অস্ত্র...

পাকিস্তান ১৩ লাখ আফগান শরণার্থীকে দেশে পাঠিয়েছে

২০২৩ সালের নভেম্বরে শুরু হওয়া নির্বাসন অভিযানে পাকিস্তান সরকার এখন পর্যন্ত প্রায়...