দিল্লির আকাশে আগে থেকেই ছিল সতর্কবার্তা। শুক্রবার ভোরে সেটাই বাস্তব হয়ে নেমে আসে ধ্বংসযজ্ঞের রূপে। প্রচণ্ড ঝড় ও ভারি বর্ষণে ভারতের রাজধানী দিল্লি এবং আশপাশের অঞ্চলগুলোর জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। প্রাণ হারায় একটি পরিবারের চারজন সদস্য, যাদের মধ্যে তিনজনই শিশু। জলাবদ্ধতা, বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নতা এবং পরিবহন ব্যবস্থার স্থবিরতা রাজধানীজুড়ে সৃষ্টি করে চরম দুর্ভোগ।
ভোর পৌনে পাঁচটার দিকে শুরু হওয়া এই ঝড় ও বৃষ্টির তীব্রতা ছিল নজিরবিহীন। কোথাও কোথাও ঝড়ের গতিবেগ পৌঁছায় ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত। ঝড়ের সময় বজ্রপাতও দেখা যায়। নজফগড় এলাকায় এক বাড়ির ওপর গাছ উপড়ে পড়লে মর্মান্তিকভাবে নিহত হন মা ও তার তিন সন্তান। পরিবারটির পুরুষ সদস্য গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
দিল্লি বিমানবন্দর কয়েক ঘণ্টার জন্য কার্যত অচল হয়ে পড়ে। বিভিন্ন ফ্লাইট বাতিল বা ঘুরিয়ে দেওয়া হয় জয়পুর, লক্ষ্ণৌ ও আহমেদাবাদের মতো বিকল্প গন্তব্যে। টার্মিনাল ৩–তে একটি লোহার কাঠামো ধসে পড়লেও সৌভাগ্যবশত কেউ আহত হননি। ফ্লাইটরেডার জানিয়েছে, ফ্লাইট ছাড়তে বিলম্ব হয়েছে সর্বোচ্চ ৬১ মিনিট পর্যন্ত।
শুধু আকাশপথ নয়, ঝড়ের কারণে রেল যোগাযোগেও ব্যাপক বিঘ্ন ঘটে। রেলমন্ত্রণালয় সূত্রে জানানো হয়, উপড়ে পড়া গাছ ও ছেঁড়া ওভারহেড তারের কারণে অন্তত ২০ থেকে ২৫টি ট্রেনের যাত্রা ব্যাহত হয়। কয়েকটি ট্রেন ছাড়তে হয়েছে নির্ধারিত সময়ের অনেক পরে।
এই দুর্যোগ রাজধানীর নানা এলাকায় বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। অল্প সময়ে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতে সৃষ্টি হয় তীব্র জলাবদ্ধতা। বন্ধ হয়ে যায় বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। অফিসগামী মানুষজন পড়েন ভয়াবহ যানজটে। শহরের নিকাশি ব্যবস্থাও কার্যত ভেঙে পড়ে, বিশেষত নিচু এলাকাগুলোতে।
এই ঝড়–বৃষ্টির একটি আশ্চর্য ফলাফল হলো তাপমাত্রার আকস্মিক পতন। গতকাল যেখানে দিল্লির তাপমাত্রা ছিল প্রায় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস, আজ তা কমে এসেছে ২০ ডিগ্রিতে। মাঝবৈশাখে হঠাৎ যেন নেমে আসে বসন্তের আমেজ।
আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, আজ শুক্রবার সন্ধ্যার পর আরও ঝড়বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। আগামীকাল শনিবারও বজ্রবিদ্যুৎসহ বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে বলে পূর্বাভাস রয়েছে। ভোরে কিছু এলাকায় বৃষ্টির পরিমাণ রেকর্ড করা হয়েছে প্রায় ৮০ মিলিমিটার।
উদ্ধার ও জরুরি পরিষেবা চালাতে কর্তৃপক্ষ তৎপর রয়েছে বলে জানা গেছে। তবে এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ দিল্লির নাগরিক জীবনের প্রতি দুর্বল অবকাঠামো ও দুর্যোগ প্রস্তুতির ঘাটতি আবারও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল।
Leave a comment