
২৫ বছর বয়সী ফাতিমা হাসুউনা ছিলেন গাজার একজন সাহসী আলোকচিত্রী। মৃত্যুর আগপর্যন্ত তিনি গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের নির্মমতা ও মানুষের দুর্বিষহ জীবন ক্যামেরায় বন্দি করে যাচ্ছিলেন। তাঁর ক্যামেরায় ধরা পড়েছে গৃহহীনতা, কান্না, ক্ষয়, এবং প্রতিদিনের ভয়াল বাস্তবতা। গাজার ভেতরে দাঁড়িয়ে, প্রতিদিন মৃত্যুর ছায়ার নিচে থেকেও তিনি কাজ করেছেন অবিচল সাহসে। মৃত্যুর মাত্র এক দিন আগে তিনি ইনস্টাগ্রামে লিখেছিলেন, “যদি আমি মারা যাই, আমি চাই আমার মৃত্যু আলোড়ন তুলুক।”
বিয়ের এক দিন আগে, গত বুধবার, ইসরায়েলি বাহিনীর বিমান হামলায় ফাতিমা নিজ বাড়িতেই প্রাণ হারান। তাঁর সঙ্গে নিহত হন পরিবারের আরও ১০ সদস্য, যাঁদের একজন ছিলেন তাঁর অন্তঃসত্ত্বা বোন। ফাতিমার মৃত্যু কোনো সাধারণ মৃত্যু ছিল না। এটা যেন ঠিক সেই রকমের মৃত্যু, যার জন্য তিনি জীবদ্দশায় প্রস্ত্তত ছিলেন—একটি মৃত্যু যা কেবল ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডি নয়, বরং এক গাজাবাসীর অনশনরত জীবনের প্রতিচ্ছবি।
ফাতিমার জীবনের ওপর নির্মিত তথ্যচিত্র “Put Your Soul on Your Hand and Walk” তাঁর মৃত্যুর আগেই নির্বাচিত হয় একটি ফরাসি চলচ্চিত্র উৎসবে। তথ্যচিত্রের পরিচালক ইরানি চলচ্চিত্রকার সেপিদেহ ফারসি জানান, ফাতিমার হাসি, কান্না, আশা ও হতাশার প্রতিটি রঙই এই কাজে তুলে ধরেছেন তিনি।
গাজার সাংবাদিক মিকদাদ জামেল বলেন, ফাতিমার তোলা ছবিগুলো যেন গাজার শিশুদের যুদ্ধকালীন শৈশবের নিঃশব্দ সাক্ষী। আর ফিলিস্তিনি কবি হায়দার আল-ঘাজালি জানিয়েছেন, ফাতিমা তাঁকে অনুরোধ করে গিয়েছিলেন, যেন তাঁর মৃত্যুর পর একটি কবিতা লেখা হয় তাঁকে ঘিরে।
ফাতিমা শুধু নিজের মৃত্যু নয়, গাজার প্রতিটি আর্ত চিৎকারকে যেন জাগিয়ে দিয়ে গেছেন। তাঁর লেন্সে বন্দি গাজা এখন বিশ্ববাসীর হৃদয়ে বেঁচে থাকবে আরও গভীরভাবে।
Leave a comment