
ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) সম্প্রতি এমন সাতটি দেশের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে, যেগুলোকে তারা অভিবাসনের দৃষ্টিকোণ থেকে ‘নিরাপদ’ বিবেচনা করছে। এই তালিকায় বাংলাদেশের নামও রয়েছে। ইউরোপীয় কমিশনের বিশ্লেষণ ও তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে তৈরি করা তালিকায় আরও রয়েছে মিসর, কসোভো, কলম্বিয়া, ভারত, মরক্কো ও তিউনিসিয়া। গত ১৭ এপ্রিল ইউরো নিউজে প্রকাশিত এক বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদনে বিষয়টি নিয়ে বিশদ আলোচনা করেন সাংবাদিক সাইমন দে লা ফেল্ড।
ইইউ বলছে, এসব দেশের নাগরিকেরা রাজনৈতিক নিপীড়ন, সহিংসতা বা মানবাধিকার লঙ্ঘনের বড় ঝুঁকিতে নেই। তাই এসব দেশ থেকে আসা নাগরিকদের ইইউভুক্ত দেশগুলোতে আশ্রয় পাওয়া আগের তুলনায় কঠিন হবে। তালিকা চূড়ান্ত হতে এখন কেবল ইইউ আদালতের অনুমোদন প্রয়োজন। ইতোমধ্যে ইউরোপীয় কমিশন এসব দেশকে নিরাপদ ঘোষণা করার জন্য যথেষ্ট তথ্য ও যুক্তি উপস্থাপন করেছে।
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, দেশটি এখন রাজনৈতিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। শান্তিতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর সেখানকার মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়ন হয়েছে বলে মনে করছে কমিশন। অতীতে দমনমূলক শাসনব্যবস্থা থাকলেও বর্তমানে দেশে কোনো সশস্ত্র সংঘাত নেই, ফলে সাধারণ জনগণ গণহত্যা বা ব্যাপক সহিংসতার মুখে নেই।
তবে বাংলাদেশে কিছু চ্যালেঞ্জ এখনো রয়েছে। যেমন, এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায় বৈষম্য ও হয়রানির শিকার হন, সমকামিতা এখনো দণ্ডনীয় অপরাধ, নারীর প্রতি সহিংসতা এবং কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি বড় সমস্যা। তবুও কমিশনের বিশ্লেষণ বলছে, এসব দুর্বলতা সত্ত্বেও সাধারণ জনগণের জন্য বাংলাদেশ এখন ‘নিরাপদ’ একটি দেশ।
অন্যদিকে, মিসরের ক্ষেত্রেও কমিশন বলেছে, দেশটিতে এখন আর জরুরি অবস্থা নেই, এবং কিছু মানবাধিকার সংস্কারমূলক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। যদিও এখনো সেখানকার মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে, তবুও দেশটিতে নাগরিকদের ব্যাপক নিপীড়নের শিকার হওয়ার সম্ভাবনা কম বলে মনে করছে ইইউ।
ইউরোপীয় কমিশনের এমন তালিকাভুক্তির প্রেক্ষাপটে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের জন্য নতুন এক বাস্তবতা তৈরি হয়েছে। ইইউ আশা করছে, নিরাপদ দেশ ঘোষণার মধ্য দিয়ে অভিবাসন নীতিতে গতি আসবে এবং আশ্রয়ের আবেদনকারীদের যাচাই ও প্রত্যর্পণের কাজ সহজতর হবে।
Leave a comment