কুমিল্লার দেবীদ্বারে সুদের টাকাকে কেন্দ্র করে সংঘটিত এক নারীর ওপর নির্মম হামলার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর দেশজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। শনিবার সকালে উপজেলার ভানি ইউনিয়নের সূর্যপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ভাইরাল হওয়া ১ মিনিট ২৬ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, স্থানীয় এক সালিস বৈঠকে প্রকাশ্যে ওই নারীকে চড়-থাপ্পড়, কিল-ঘুষি মারছেন কয়েকজন পুরুষ। ভিডিওতে উপস্থিত ছিলেন ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মনির ফরাজি, আর মারধরের মূল ভূমিকা পালন করেন একই ইউনিয়নের বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় ইউপি সদস্য আবদুল আউয়াল।
ভুক্তভোগী নারী হাসিনা আক্তার, সূর্যপুর গ্রামের প্রয়াত আয়েব আলীর মেয়ে, বর্তমানে স্বামী ও সন্তানদের নিয়ে বাবার বাড়িতেই বসবাস করছেন। তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী, স্থানীয় এক ব্যক্তি আলী আশরাফের কাছ থেকে তিনি সুদে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা নিয়েছিলেন। টাকা ফেরত দিতে দেরি হওয়ায় সালিস বসে এবং সেখানে তাঁকে নিজের বসতভিটা লিখে দেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হয়। এ নিয়ে আপত্তি করলে তাঁর ওপর চড়াও হন সালিসে উপস্থিত নেতারা।
হাসিনার অভিযোগ, সালিস চলাকালে তিনি উত্তেজিত হয়ে বলেন, আউয়াল মেম্বার ৫০ হাজার টাকা ঘুষ খেয়ে আমার সঙ্গে এমন করছেন। এই মন্তব্যের পরই তিনি গালাগাল ও মারধরের শিকার হন। এভাবে জনসমক্ষে একজন নারীকে টেনে-হিঁচড়ে এনে লাঞ্ছিত করার কোনো বিচার না হলে, নারীদের জন্য সমাজ আর কতটা ভয়ানক হয়ে উঠবে?—প্রশ্ন হাসিনার।
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে রোববার দেবীদ্বার থানায় হাসিনা আক্তার বাদী হয়ে সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। প্রধান আসামি করা হয়েছে আবদুল আউয়ালকে। মনির ফরাজিসহ বাকি আসামিরাও বিএনপির স্থানীয় এবং উত্তর জেলা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ। তবে রাত ৯টা পর্যন্ত পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। মামলার পর থেকেই অভিযুক্তরা এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে চলে গেছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
দেবীদ্বার থানার ওসি শামসুদ্দিন ইলিয়াস জানান, ভিডিওটি সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানোর পর দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মামলার তদন্ত চলছে এবং আসামিদের ধরতে অভিযান চালানো হচ্ছে।
অন্যদিকে কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির সদস্যসচিব এ এফ এম তারেক মুন্সী বলেন, এটা দলীয় কোনো বিষয় নয়। এটা স্থানীয় একটি ব্যক্তিগত ঘটনা। পুলিশকে নিরপেক্ষ তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর ব্যাপক ক্ষোভ ও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। অনেকেই বলছেন, একজন নারীকে এভাবে জনসমক্ষে লাঞ্ছনা করা শুধু অপরাধ নয়, এটা আমাদের সামাজিক নিরাপত্তার চরম অবক্ষয়। এখন দেখার বিষয়, আইনের হাত কতদূর পৌঁছাতে পারে।
Leave a comment