যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, বিভিন্ন দেশের পণ্যের উপর আরোপিত পাল্টা শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছেন। এই মেয়াদের মধ্যে, সর্বনিম্ন পাল্টা শুল্ক ১০ শতাংশে কমিয়ে দেয়া হবে। অবশ্য চীনের পণ্যে শুল্ক বাড়িয়ে ১২৫ শতাংশ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
বুধবার নিজস্ব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম “ট্রুথ সোস্যালে” একটি পোস্টের মাধ্যমে এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছেন ট্রাম্প। পোস্টে তিনি উল্লেখ করেন যে, ৭৫টিরও বেশি দেশের প্রতিনিধিরা বিভিন্ন বিষয়ে (যেমন বাণিজ্য, শুল্ক, মুদ্রার মান ইত্যাদি) আলোচনা করার জন্য যোগাযোগ করেছে। চীন ব্যতীত অন্যান্য দেশের পণ্যের উপর আরোপিত পাল্টা শুল্ক সাময়িকভাবে হ্রাস করে ১০ শতাংশ করা হবে। এতে মেক্সিকো ও কানাডার পণ্যও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বলেছেন, যারা পাল্টা শুল্ক আরোপ করেনি তাদের উপর বিশেষ সুবিধা প্রদান করা হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমি এটাকে বাণিজ্যযুদ্ধ বলব না। অবশ্য চীন এটা উসকে দিয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘এই স্থগিতাদেশ আলোচনার জন্য আমাদের সময় দেবে। আরও দেশ যোগাযোগ করবে বলে আশা করছি।’
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানিতে পাল্টা শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। বুধবার রাত ১২টার দিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক পোস্টে এ তথ্য জানানো হয়।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের অফিশিয়াল এক্স অ্যাকাউন্ট মেনশন করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘৯০ দিনের শুল্ক স্থগিত করতে আমরা যে অনুরোধ করেছিলাম, তাতে ইতিবাচক সাড়া দেওয়ায় প্রেসিডেন্ট আপনাকে ধন্যবাদ। আপনার বাণিজ্য এজেন্ডার সমর্থনে আপনার প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করা অব্যাহত রাখব আমরা।’
অন্যান্য দেশের ওপর পাল্টা শুল্ক কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হলেও চীনের পণ্যের ওপর আরও ২১ শতাংশ বাড়িয়ে ১২৫ শতাংশ করার ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প। এর আগে মঙ্গলবার দিবাগত রাতেই জানা যায়, চীনের পাল্টা শুল্কে খেপে ডোনাল্ড ট্রাম্প দেশটির পণ্যে অতিরিক্ত শুল্ক বাড়িয়ে ১০৪ শতাংশে উন্নীত করেছিলেন।
ট্রাম্পের সর্বশেষ শুল্ক আরোপের জবাবে চীন মার্কিন পণ্যে ৮৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে, যা আগে ছিল ৩৪ শতাংশ। বৃহস্পতিবার থেকে চীনের ধার্য করা এ শুল্ক কার্যকর হবে বলে জানানো হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ১০৪ শতাংশ শুল্ককে নিপীড়নমূলক আখ্যা দিয়ে তারা এ শুল্ক আরোপ করে। চীনের এ সিদ্ধান্তে আরও চটেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। বুধবার অন্যান্য দেশের পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত এবং এ সময়ে ন্যূনতম ১০ শতাংশ শুল্ক ঘোষণা করা হলেও চীনকে এ সুযোগ দেওয়া হয়নি।
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র ক্যারোলাইন লেভিট এদিন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘ট্রাম্প চীনের ওপর শুল্ক বাড়িয়েছেন। কারণ, আপনি যখন যুক্তরাষ্ট্রকে আঘাত করবেন, তখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পাল্টা আরও কঠিন আঘাত করতে যাবেন।’
বিশ্লেষকেরা বলছেন, এর মধ্য দিয়ে বাণিজ্যযুদ্ধ পুরোদমে শুরু হয়ে যায়।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়, চীনের পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ১০৪ শতাংশ শুল্কের প্রতিক্রিয়ায় বুধবার এশিয়ার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হতে হতেই বড় ধরনের পতন হয়। এরপর ইউরোপের শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হওয়ার পরপরই সূচকের পতন হয়। যুক্তরাজ্যের লন্ডনভিত্তিক আঞ্চলিক সূচক প্যান-ইউরোপীয় স্টকস ৬০০ কমেছে ৩ দশমিক ৪ শতাংশ। আঞ্চলিক এই সূচকের অন্তর্ভুক্ত সব খাতের শেয়ারের দামেই নেতিবাচক প্রবণতা চলছে।
আঞ্চলিক স্বাস্থ্যসেবা, খনি, তেল ও গ্যাস খাতের সূচকগুলো ব্যাপক হারে পড়ে গেছে। এর মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা, খনি, তেল ও গ্যাস খাতের শেয়ারের দাম যথাক্রমে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ, ৩ দশমিক ৩ শতাংশ ও ৪ দশমিক ৬ শতাংশ কমেছে। সেই সঙ্গে দাম কমে যায় জ্বালানি তেলের। চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসে। ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম নেমে আসে প্রতি ব্যারেল ৬০ ডলারে।
ট্রাম্পের পক্ষ থেকে নেওয়া শুল্ক নীতি সংশোধন কৌশলগত ও কূটনৈতিক একটি পদক্ষেপ হিসেবে প্রতীয়মান হচ্ছে। যদিও চীন ব্যতীত অন্যান্য দেশের উপর পাল্টা শুল্ক কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে, কিন্তু চীনের পণ্যের ওপর কঠোর শুল্ক প্রয়োগ করা বাণিজ্যিক উত্তেজনা ও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে। এই সিদ্ধান্তকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আলোচনার প্ল্যাটফর্মে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় হিসেবে ধরা হচ্ছে, যেখানে আগামী দিনগুলোতে সম্ভাব্য সমঝোতার মাধ্যমে সমস্যার মীমাংসা প্রয়াস করা হবে।
Leave a comment