ভারতের মণিপুর রাজ্যে ওয়াক্ফ আইন নিয়ে নতুন করে দানা বাঁধতে শুরু করেছে তীব্র রাজনৈতিক ও সামাজিক উত্তেজনা। রাজ্যের মুসলিম মেইতেই পাঙ্গাল সম্প্রদায় এই আইনের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু করেছে। বিক্ষোভের আঁচ ছড়িয়ে পড়েছে রাজ্যের একাধিক জেলায়—ইম্ফল পূর্ব, থৌবাল ও বিষ্ণুপুরে দেখা গেছে মানববন্ধন, পদযাত্রা, এমনকি অগ্নিসংযোগও।
গত রোববার থেকে শুরু হওয়া এই আন্দোলনে হাজার হাজার মানুষ অংশ নিচ্ছেন। তাঁদের দাবি, ওয়াক্ফ আইন বাস্তবায়িত হলে মুসলিম সমাজের বহু ঐতিহাসিক এবং পারিবারিক সম্পত্তি সরকারের অধীনে চলে যাবে, যা তারা কোনোভাবেই মানতে রাজি নয়। এক ব্যবসায়ী আবদুল সাতর বলেন, “আমাদের আন্দোলনের পেছনে মেইতেই সমাজের বড় অংশ রয়েছে। আমাদের আবেগকে উপেক্ষা করলে সরকার আবারও বিপদের মুখে পড়বে।”
রাজ্যের সংখ্যালঘু মোর্চার সভাপতি ও পাঙ্গাল সম্প্রদায়ের নেতা আস্কের আলীর বাড়িতে রোববার বিক্ষোভকারীরা আগুন ধরিয়ে দেন। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ—তিনি বিজেপি নেতা হিসেবে ওয়াক্ফ আইনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
এমন উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির এক বিধায়ক শেখ নুরুল হাসান ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি এই আইনের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করবেন। তাঁর ভাষায়, “এই আইন মুসলিম সমাজের ওপর সরাসরি আক্রমণ। আমরা আইনের আশ্রয় নেব।”
অন্যদিকে, ওয়াক্ফ বিতর্কে পশ্চিমবঙ্গে একেবারে ভিন্ন সুর শোনা গেছে। বুধবার কলকাতায় সংখ্যালঘু জৈন সম্প্রদায়ের এক অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট ঘোষণা দেন—“পশ্চিমবঙ্গে ওয়াক্ফ চালু হবে না।” তিনি বলেন, “সংখ্যালঘুদের মনে কষ্ট হয়েছে আমি জানি। কিন্তু আপনারা নির্ভর রাখুন। পশ্চিমবঙ্গে এই ধরনের বিভাজনের রাজনীতি হবে না।”
মমতার এই ঘোষণা এমন এক সময় এলো, যখন রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় ওয়াক্ফবিরোধী বিক্ষোভ দানা বাঁধছে। বিশেষ করে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর, রঘুনাথগঞ্জ ও সুতি এলাকায় গতকাল মঙ্গলবার পরিস্থিতি ভয়াবহ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। বিক্ষুব্ধ জনতা পুলিশের দুটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং পাথর ছোঁড়ে। প্রশাসনের দাবি, তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠিচার্জ করে।
অন্যদিকে স্থানীয়দের অভিযোগ, শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে পুলিশ অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করেছে, যার ফলে অন্তত ২৫ জন গুরুতর আহত হয়েছেন। এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় জনতা প্রতিরোধ গড়ে তোলে এবং উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। প্রশাসন পরিস্থিতি মোকাবেলায় ওই এলাকায় ধারা ১৪৪ জারি করেছে এবং আজও তা বলবৎ রয়েছে।
ওয়াক্ফ আইন ঘিরে ভারতজুড়ে এই যে উত্তেজনা ও প্রতিক্রিয়া—তা রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ এবং সামাজিক শান্তির ভবিষ্যতের ওপর বড় প্রভাব ফেলতে চলেছে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
Leave a comment