গাজীপুরে শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা এবং তার পরিবারের বিপুল পরিমাণ সম্পদের অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সরকারি সূত্র জানায়, প্রাথমিক অনুসন্ধানে গাজীপুরের বিভিন্ন অঞ্চলে শত কোটি টাকার সম্পদের খোঁজ পাওয়া গেছে, যা মূলত অবকাশযাপন এবং ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য তৈরি করা হয়েছিল।
গাজীপুর মহানগরীর কানাইয়া এলাকায় অবস্থিত শেখ রেহানার মেয়ের নামে নির্মিত এক বাগানবাড়ি ‘টিউলিপ’স টেরিটরি’ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই। প্রায় ৩৫ বিঘা জমির ওপর নির্মিত এই বাগানবাড়িতে রয়েছে বাংলো, পুকুর, ফুল-ফলের বাগান এবং নান্দনিক সবুজ পরিবেশ। তবে সরকারের পতনের পর এই বাগানবাড়িতে কেউ আসেনি বলে জানায় এর কর্মচারীরা।
দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা গেছে, গাজীপুরে অন্তত ১৬৫ কোটি টাকার স্থাবর সম্পদ রয়েছে শেখ রেহানার পরিবারের নামে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে:
কানাইয়ার টিউলিপ’স টেরিটরি (৩৫ বিঘা)
বাঙালগাছ এলাকায় ‘বাগান বিলাস’ (২৫ বিঘা)
ফাওকাল এলাকায় বিলাসবহুল বাংলো (২৩ বিঘা)
মৌচাকের কালিয়াকৈর এলাকায় বাংলো (১৫-১৬ বিঘা)
দুদক জানিয়েছে, এসব সম্পত্তির বেশিরভাগই শেখ রেহানার স্বামী শফিক আহমেদ সিদ্দিক এবং তার নিকট আত্মীয়দের নামে নিবন্ধিত।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গত ৫ আগস্ট সরকারের পতনের পর কানাইয়ার টিউলিপ’স টেরিটরিতে হামলা হয়। এতে বাংলোর বেশ কিছু অংশ ভাঙচুর এবং আসবাবপত্র লুটপাট করা হয়। দায়িত্বে থাকা কর্মচারীরা জানান, ঘটনার পর থেকে পরিবারটির কেউ আর বাগানবাড়িতে আসেনি।
কানাইয়ার স্থানীয় বাসিন্দা হাফিজ উদ্দিন বলেন, “এই বাগানবাড়িতে আমাদের প্রবেশ নিষেধ ছিল। এত বিশাল জায়গা কিনে এভাবে সাজানো দেখে অবাক হতাম।” আরেক বাসিন্দা ওয়াদুদ হোসেন জানান, শেখ রেহানা পরিবারের সদস্যরা মাঝে মাঝে এখানে আসতেন এবং নিরাপত্তা ছিল খুবই কঠোর।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, এই সম্পত্তির উৎস এবং ক্রয় সংক্রান্ত কাগজপত্র যাচাই করা হচ্ছে। পাশাপাশি স্থানীয়দের কাছ থেকে এসব জমি কেনার প্রক্রিয়া সম্পর্কেও তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের এক কর্মকর্তা জানান, “এখন পর্যন্ত চারটি স্থাপনার তথ্য আমরা পেয়েছি। আরও অনুসন্ধান চলছে।”
গাজীপুরে শেখ রেহানা পরিবারের এই বিপুল সম্পদ এখন বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে। এসব সম্পদের প্রকৃত উৎস এবং সেগুলোর ব্যবহারের বৈধতা নিশ্চিত করতে দুদকের অনুসন্ধান কতদূর যেতে পারে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
Leave a comment