১৯১৯ সালের ২৬ এপ্রিল ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ দিন। এই দিনে বিশ্বরাজনীতিতে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে প্রতিষ্ঠিত হয় “লীগ অব নেশনস” বা “জাতিপুঞ্জ”। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ ও মানবিক বিপর্যয়ের পর বিশ্বের নেতারা উপলব্ধি করেন, এমন ভয়াল যুদ্ধ ঠেকাতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য একটি সংগঠনের প্রয়োজন রয়েছে। সেই প্রয়োজন থেকেই গঠিত হয় এই প্রথম বৈশ্বিক সংস্থা।
ভার্সাই চুক্তির অংশ হিসেবে জাতিপুঞ্জ গঠনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসে। যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসনের প্রস্তাবনায় এ সংস্থার ভিত্তি স্থাপিত হয়। তার লক্ষ্য ছিল দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্বের পরিবর্তে আলোচনা, কূটনৈতিক সংলাপ এবং সমঝোতার মাধ্যমে শান্তি বজায় রাখা। যদিও পরে যুক্তরাষ্ট্র নিজেই এতে যোগ দেয়নি, তবুও ইউরোপ এবং বিশ্বের বহু দেশ এই সংগঠনের সদস্য হয়।
জাতিপুঞ্জ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এক নতুন ধারা সূচিত হয়। যুদ্ধ প্রতিরোধ, অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ, মানবাধিকার রক্ষা, সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা, শ্রমিকের অধিকার নিশ্চিতকরণসহ বিভিন্ন বিষয়ে সংস্থাটি কাজ করতে শুরু করে। তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতার মুখে পড়ে জাতিপুঞ্জ তার মূল উদ্দেশ্য সফলভাবে রক্ষা করতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত ১৯৪৫ সালে জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে জাতিপুঞ্জের জায়গা নেয় নতুন ও আরও শক্তিশালী আন্তর্জাতিক সংস্থা।
তবুও ২৬ এপ্রিল ১৯১৯ সাল বিশ্ব ইতিহাসে স্মরণীয়, কারণ এদিন থেকেই মানবজাতি প্রথমবারের মতো যুদ্ধ ও সংঘাতের বাইরে শান্তির জন্য সম্মিলিত প্রচেষ্টার দিকে এগিয়ে যায়।
Leave a comment