আজ থেকে ঠিক ১৬৪ বছর আগে, কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে জন্ম নিয়েছিলেন এমন একজন মানুষ, যিনি একদিন হয়ে উঠবেন বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির শ্রেষ্ঠতম ধ্বজাধারী। তার নাম—রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
২৫শে বৈশাখ, ১২৬৮ বঙ্গাব্দ। ঠাকুরবাড়িতে ছিল একধরনের নিঃশব্দ উল্লাস। দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও সারদাসুন্দরী দেবীর চতুর্দশ সন্তান, সেই শিশু রবীন্দ্রনাথ, ভবিষ্যতের এক অমূল্য রত্ন হয়ে ধীরে ধীরে বিকশিত হতে থাকেন।
শৈশবে তিনি বিদ্যালয়ের চার দেয়ালের মধ্যে স্বস্তি পাননি; বরং প্রকৃতি, সংগীত, কাব্য ও দর্শনের টানে নিজেকে গড়ে তুলেছিলেন নিজস্ব ধারায়। আট বছর বয়সেই কাব্যচর্চার সূচনা, আর মাত্র ১৩ বছর বয়সে পত্রিকায় প্রথম কবিতা প্রকাশ। এরপরের গল্প এক অভাবনীয় উত্থানের।
১৮৭৮ সালে মাত্র সতেরো বছর বয়সে পাড়ি জমান ইংল্যান্ডে। কিন্তু সেখানে থেকেও হারিয়ে যাননি শিকড়ের টানে। ফিরে এসে বাংলা সাহিত্যকে দিলেন এক নবজাগরণের ধারা। “ভিখারিণী” গল্প দিয়ে শুরু হলো বাংলা ছোটগল্পের নতুন যুগ। এরপর একে একে এল “গীতাঞ্জলি”, “ঘরে বাইরে”, “গোরা”, “রবীন্দ্র সঙ্গীত”—এবং আরও শত শত সৃষ্টি।
১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়ে রবীন্দ্রনাথ শুধু বাংলা নয়, সমগ্র এশিয়ার প্রথম নোবেল বিজয়ী হিসেবে ইতিহাসে নাম লেখান।
কিন্তু বিশ্বকবির পথ শুধু সম্মানের ছিল না। রাজনীতি, সমাজ, মানবতা—সব কিছুর সাথেই ছিল তার সক্রিয় মনোযোগ। ১৯১৯ সালে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে তিনি ব্রিটিশ সরকারের ‘নাইট’ উপাধি ফিরিয়ে দেন। শান্তিনিকেতন প্রতিষ্ঠা করে গড়ে তুলেছিলেন শিক্ষা ও মানবিকতার এক নতুন আঙ্গিক।
আজ এই দিনে, বিশ্ববাসীর উচিত স্মরণ করা সেই আলোকবর্তিকাকে, যিনি একাধারে ছিলেন কবি, গীতিকার, দার্শনিক, শিল্পী ও মানবতাবাদী। শুধু বাংলা নয়, গোটা পৃথিবীর সাংস্কৃতিক মানচিত্রে তার নাম উজ্জ্বল হয়ে আছে চিরকাল।
রবীন্দ্রনাথ জন্মেছিলেন এক কবিতার মতো দিনে—২৫শে বৈশাখ। তার জীবনও ছিল এক মহাকাব্য, যেখানে শব্দ, সুর ও চিন্তার দোলায় জেগে উঠেছে এক নতুন বিশ্বচেতনা।
Leave a comment