শহিদ শরীফ ওসমান হাদি হত্যার বিচারের দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ মোড় উত্তাল হয়ে উঠেছে। সরকারের পক্ষ থেকে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি না থাকায় আন্দোলনকারী সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চের নেতাকর্মীদের ক্ষোভ আরও তীব্র হয়েছে। শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) চলমান অবস্থান কর্মসূচি থেকে সংগঠনটির নেতারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে জানান, দাবি মানা না হলে যেকোনো সময় আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে, যার মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা ও জাতীয় সংসদ ভবন ঘেরাওয়ের মতো পদক্ষেপও থাকতে পারে।
শাহবাগে আয়োজিত সমাবেশে ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের বলেন, “হাদি হত্যার বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত কাউকে নিরাপদ প্রস্থান করতে দেওয়া হবে না।” তিনি বলেন, আন্দোলনকারীরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করলেও সরকারের নিষ্ক্রিয়তা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে। বিচার প্রক্রিয়ায় অগ্রগতি না হলে আন্দোলন আরও বিস্তৃত করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া ছাত্র-জনতা ‘হাদি হত্যার বিচার চাই’, ‘খুনিদের গ্রেপ্তার কর’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন। আন্দোলনকারীরা দ্রুত হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার এবং ঘটনার নেপথ্যে থাকা পরিকল্পনাকারীদের শনাক্ত ও বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান। ইনকিলাব মঞ্চের পক্ষ থেকে স্পষ্ট করে বলা হয়, ন্যায়বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তারা রাজপথ ছাড়বেন না।
আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, হাদি হত্যার বিচার প্রক্রিয়ায় সরকার গড়িমসি করছে। তাদের মতে, সময়ক্ষেপণ ও নীরবতা শহিদদের আত্মত্যাগের প্রতি অবমাননার শামিল। একাধিক বক্তা বলেন, এই হত্যাকাণ্ড কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়; এর পেছনে পরিকল্পিত শক্তি রয়েছে, যাদের শনাক্ত না করলে ভবিষ্যতে এমন সহিংসতা বন্ধ হবে না।
সমাবেশে বক্তব্য দিতে গিয়ে আব্দুল্লাহ আল জাবের সরকারের উপদেষ্টাদের কঠোর ভাষায় সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, “যারা মনে করছেন কিছুদিন ক্ষমতায় থেকে বিদেশে চলে যাবেন, তাদের এই ধারণা ভুল। রক্তের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করলে জনগণই তাদের বিচার করবে।”
তিনি আরও দাবি করেন, প্রায় ১ হাজার ৪০০ শহিদের রক্তের বিনিময়ে ক্ষমতায় আসা বর্তমান সরকার এখনো হত্যাকারীদের বিচারের আওতায় আনতে ব্যর্থ হয়েছে। তার ভাষায়, এটি জনগণের ম্যান্ডেটের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং রাষ্ট্রীয় দায়বদ্ধতার গুরুতর ব্যত্যয়।
হাদি হত্যার বিচার প্রক্রিয়ায় কারা বাধা সৃষ্টি করছে—সে প্রশ্ন তুলে জাবের বলেন, খুনের সঙ্গে জড়িতদের নাম প্রকাশ করা হোক। তিনি যোগ করেন, “বিচার নিশ্চিত করতে পারলে আন্দোলনকারীরাই নিরাপত্তা দেবে। কিন্তু ব্যর্থ হলে সরকারকে এর জবাবদিহি করতেই হবে।”
শাহবাগ এলাকায় আন্দোলন ঘিরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পরিস্থিতি শান্ত রাখতে এবং যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তবে আন্দোলনের কারণে আশপাশের সড়কে যানজট সৃষ্টি হয়েছে এবং ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ইনকিলাব মঞ্চের এই আন্দোলন কেবল একটি হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে সীমাবদ্ধ নেই; এটি বর্তমান সরকারের জবাবদিহি ও ন্যায়বিচার প্রশ্নে বড় ধরনের রাজনৈতিক চাপ তৈরি করছে।
এদিকে সরকারের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বিস্তারিত বক্তব্য পাওয়া যায়নি। সংশ্লিষ্ট মহলের নীরবতা আন্দোলনকারীদের মধ্যে সন্দেহ ও ক্ষোভ আরও বাড়িয়ে তুলেছে। ইনকিলাব মঞ্চের নেতারা বলছেন, যদি দ্রুত দৃশ্যমান পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তাহলে আন্দোলন রাজধানীর অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ছড়িয়ে দেওয়া হবে।
Leave a comment