রাঙ্গামাটির চন্দ্রঘোনায় এক চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে। কৃষক দিদার আলমকে (২৮) ঘুমের ওষুধ খাইয়ে হত্যার অভিযোগে তার স্ত্রী কহিনূর আক্তারসহ চারজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। তদন্তে উঠে এসেছে, কহিনূরের একাধিক পরকীয়ার জটিল সম্পর্কই দিদার আলমের হত্যার পেছনে মূল কারণ।
রোববার (১২ অক্টোবর) বিষয়টি নিশ্চিত করেন পিবিআই চট্টগ্রাম জেলা ইউনিটের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) ওমর ফারুক। নিহত দিদার আলম রাঙ্গামাটি জেলার চন্দ্রঘোনা থানার পশ্চিম কোদালা গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন।
পিবিআই সূত্রে জানা গেছে, প্রায় তিন মাস আগে, গত ৩০ জুন রাতে দিদার আলমকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়। কহিনূর আক্তার তার স্বামীকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করে ফেলেন। এরপর সহযোগী আব্দুল খালেক ও মো. হানজালার সহায়তায় তাকে হত্যা করে মরদেহ প্লাস্টিক দিয়ে মুড়িয়ে পার্শ্ববর্তী কোদালা খালে ফেলে দেওয়া হয়। সেই রাতে প্রবল বৃষ্টি হওয়ায় খালে প্রচণ্ড স্রোত ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, মরদেহ ভেসে গেছে— ফলে এখনো তা উদ্ধার সম্ভব হয়নি।
দীর্ঘ তদন্ত শেষে পিবিআই চট্টগ্রাম জেলা ইউনিটের তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মো. রুহুল আমিনের নেতৃত্বে গত ৪ অক্টোবর গাজীপুরের জয়দেবপুর এলাকা থেকে কহিনূর আক্তার ও তার সহযোগী আব্দুল খালেককে গ্রেফতার করা হয়। পরবর্তীতে তাদের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে ১১ অক্টোবর চট্টগ্রাম শহর থেকে আরও দুই আসামি— মো. হানজালা ও মো. সেলিমকে আটক করে পিবিআই।
জিজ্ঞাসাবাদে কহিনূর আক্তার বিস্তারিত স্বীকারোক্তি দেন। তিনি বলেন, “দিদার আলমকে আমি ঘুমের ওষুধ খাইয়ে হত্যা করি। খালেক ও হানজালা আমাকে এ কাজে সহায়তা করে।”
তদন্তে জানা গেছে, কহিনূর আক্তারের একাধিক প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তিনি একই সঙ্গে আব্দুল খালেক ও মো. হানজালার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ছিলেন। খালেকের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি তার স্বামী জানলেও, হানজালার সম্পর্ক গোপন ছিল।
পিবিআই চট্টগ্রাম জেলা ইউনিটের সহকারী পুলিশ সুপার ওমর ফারুক বলেন, “কহিনূরের মূল সম্পর্ক ছিল হানজালার সঙ্গে। খালেকের বিষয়টি দিদার জানতেন, তবে হানজালার বিষয়টি গোপন ছিল। হত্যার পেছনে প্রেমঘটিত দ্বন্দ্ব ও গোপন সম্পর্কের টানাপোড়েনই মূল কারণ বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে।”
গ্রেফতারের পর চারজন আসামিকে আদালতে হাজির করা হলে কহিনূর আক্তার, হানজালা ও সেলিম স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন। তারা আদালতে বলেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘুমের ওষুধ খাইয়ে হত্যার পর মরদেহ নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। তবে এখনো পর্যন্ত মরদেহ উদ্ধার না হওয়ায় মামলার তদন্ত সম্পূর্ণ হয়নি। পিবিআই জানিয়েছে, খালের বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি চালানো হচ্ছে।
দিদার আলমের নিখোঁজ হওয়ার পর থেকেই এলাকাজুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয়রা প্রথম থেকেই আব্দুল খালেককে সন্দেহ করলেও প্রাথমিক তদন্তে তার সরাসরি সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া যায়নি।তবে কহিনূরের গ্রেফতারের পর পুরো চন্দ্রঘোনা এলাকায় ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেকে এটিকে “পরকীয়ার ভয়াবহ পরিণতি” বলে মন্তব্য করেছেন।
এএসপি ওমর ফারুক বলেন, “এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। আমরা মরদেহ উদ্ধারের পাশাপাশি হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত উপকরণ ও প্রমাণ সংগ্রহে কাজ করছি। তদন্ত শেষ হলে আদালতে বিস্তারিত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।”
মানবাধিকার ও সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, পারিবারিক সম্পর্কের ভাঙন ও নৈতিক অবক্ষয়ের কারণে এ ধরনের অপরাধের ঘটনা বাড়ছে। সমাজে পারস্পরিক বিশ্বাসের সংকট এমন চরম পরিণতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে অনেক পরিবারকে।
Leave a comment