সৌদি আরব জুড়ে অবৈধ অবস্থান, শ্রম আইন ও সীমান্ত নিরাপত্তা আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে পরিচালিত বিশেষ অভিযানে এক সপ্তাহে ২১ হাজারের বেশি মানুষকে আটক করেছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে ১৩,২৭৯ জন অভিবাসীকে ইতিমধ্যে বহিষ্কার করা হয়েছে।
শনিবার (১ নভেম্বর) স্থানীয় সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে জানানো হয়, ২৩ থেকে ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত চলা এই অভিযানে মোট ২১ হাজার ৬৫১ জনকে আটক করা হয়। এটি সৌদি আরবের চলমান ‘অবৈধ অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম’-এর অংশ, যার লক্ষ্য দেশটিতে অননুমোদিত অবস্থান সম্পূর্ণ শূন্যে নামিয়ে আনা।
সৌদি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, আটক ব্যক্তিদের মধ্যে- ১২,৭৪৫ জন আবাসন (ইকামা) আইন লঙ্ঘনকারী, ৪,৫৭৭ জন সীমান্ত নিরাপত্তা আইন ভঙ্গকারী, এবং ৪,৩২৯ জন শ্রম আইন লঙ্ঘন করেছেন। অভিযানের সময় আরও ১,৬৮৯ জন সৌদিতে অবৈধভাবে প্রবেশের চেষ্টা করার সময় ধরা পড়েন। তাদের মধ্যে ৫৩ শতাংশ ইথিওপীয়, ৪৬ শতাংশ ইয়েমেনি, এবং ১ শতাংশ অন্যান্য দেশের নাগরিক।
অভিযানে শুধু অভিবাসীরাই নয়, তাদের আশ্রয়দাতা ও সহযোগীরাও ধরা পড়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২১ জন সৌদি নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে যারা অবৈধ প্রবাসীদের আবাসন, পরিবহন বা কাজে নিয়োজিত করেছিলেন। এ ছাড়া ৫৯ জন বিদেশি নাগরিককে আটক করা হয়েছে যারা সৌদি আরব ছাড়তে গিয়ে অবৈধ অবস্থানের প্রমাণে ধরা পড়েন।
বর্তমানে দেশজুড়ে ৩১,৮২৬ জন আটক অবস্থায় রয়েছেন, যার মধ্যে- ৩০,১৫১ জন পুরুষ এবং ১,৬৭৫ জন নারী।
এদের মধ্যে ২১,৯৮০ জন নিজ নিজ দেশের দূতাবাসের মাধ্যমে ভ্রমণ নথি সংগ্রহের প্রক্রিয়ায় রয়েছেন, আর ৫,০১০ জন দেশে ফেরার প্রস্তুতি সম্পন্ন করছেন বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়। সৌদি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই অভিযান চলমান থাকবে যতদিন না অবৈধ অবস্থান “সম্পূর্ণরূপে নির্মূল” হয়। বিবৃতিতে বলা হয়,“দেশে অবৈধভাবে অবস্থান, শ্রম আইন বা সীমান্ত আইন ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা নীতি অনুসরণ করা হচ্ছে। সৌদি আরবের নিরাপত্তা ও সামাজিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় এটি অপরিহার্য।”
মানবাধিকার ও প্রবাসী সংগঠনগুলো জানিয়েছে, সৌদি সরকারের এ অভিযান সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কঠোরতম। অভিযানকালে আটক অভিবাসীদের মধ্যে বহু বাংলাদেশি, ভারতীয়, পাকিস্তানি ও আফ্রিকান নাগরিক রয়েছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই পদক্ষেপ মূলত সৌদি সরকারের “ভিশন ২০৩০” পরিকল্পনার অংশ, যেখানে শ্রমবাজারে স্থানীয়দের অংশগ্রহণ বাড়ানোর পাশাপাশি অবৈধ প্রবাসীদের উপস্থিতি হ্রাস করা হচ্ছে। এর আগেও সৌদি আরব ২০১৭ ও ২০২০ সালে একই ধরনের অভিযানে লাখো অবৈধ প্রবাসীকে দেশে পাঠিয়েছিল।
তবে এবার অভিযানটি আরও ব্যাপক পরিসরে পরিচালিত হচ্ছে, যেখানে আধুনিক প্রযুক্তি, ডেটাবেস ট্র্যাকিং এবং সীমান্ত নিরাপত্তা বাহিনীর নজরদারি ব্যবস্থাকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। সৌদি আরবে অবৈধ প্রবাসীদের বিরুদ্ধে চলমান অভিযান এখন সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। ইতিমধ্যে হাজারো অভিবাসী বহিষ্কৃত হয়েছেন । স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় স্পষ্ট জানিয়েছে—অবৈধ বসবাস বা অননুমোদিত শ্রমে জড়িতদের সৌদি মাটিতে আর কোনো ছাড় নেই।
Leave a comment