হেলেন আহমেদ—একটি বহুল আলোচিত নাম সিলেটে। সামরিক, বেসামরিক বা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার—যেকোনো পরিস্থিতিতেই তিনি থেকেছেন ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে। রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক মহলে তার দাপট ছিল উল্লেখযোগ্য। একসময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন এবং তার স্ত্রী সেলিনা মোমেনের ঘনিষ্ঠ হয়ে তিনি প্রশাসনে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেন।
সিলেটের প্রশাসনে তার প্রভাব এতটাই ছিল যে, তার অনুমতি ছাড়া কেউ মন্ত্রীর কাছে সহজে পৌঁছাতে পারতেন না। তিনি ডিসি-এসপি থেকে শুরু করে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়ন্ত্রণ করতেন। এমনকি, নিজের ক্ষমতা প্রমাণ করতে একবার সিলেটের ডিআইজিকে স্ট্যান্ডরিলিজ করিয়েছিলেন তিনি। তবে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলের সঙ্গে ক্ষমতার লড়াইয়ে তিনি টিকতে পারেননি।
হেলেন আহমেদ মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃত্ব নিজের হাতে কুক্ষিগত করেন। ক্ষমতার দাপটে প্রশাসন ও স্থানীয় ব্যবসায়ী মহলকে প্রভাবিত করে তিনি নানা সুবিধা আদায় করতেন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সহধর্মিণীর ক্যাশিয়ার হয়ে উঠেছিলেন এবং প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে দুর্নীতির সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছিলেন।
২০২১ সালে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সংলগ্ন এলাকায় তার জমির শ্রেণি পরিবর্তনের ঘটনা ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দেয়। তিনি মাত্র ২৭ দিনের ব্যবধানে ৭৮৬ শতক ‘টিলা’ শ্রেণির জমিকে ‘ভিটা’ ও ‘বাড়ি’তে রূপান্তরিত করান, যা প্রশাসনিক প্রভাব খাটিয়ে করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে।
গত বছরের ৫ই আগস্টের ঘটনার পর হেলেন আত্মগোপনে চলে যান এবং পরে লন্ডনে পাড়ি জমান। বর্তমানে তিনি সন্তানদের সঙ্গে সেখানে বসবাস করছেন বলে জানা গেছে।
এই বিষয়ে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন জানান, তিনি হেলেনের সঙ্গে তেমন ঘনিষ্ঠ ছিলেন না এবং তার ক্ষমতা ও সম্পদের ব্যাপারে তিনি অবগত ছিলেন না। তবে তার নামে গড়া ফাউন্ডেশনে হেলেনের জমি দানের বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে বিতর্ক সৃষ্টি হয়।
সিলেটের রাজনীতিতে হেলেন আহমেদের অনুপস্থিতি থাকলেও, তার প্রভাব ও বিতর্ক এখনো জনমনে আলোচিত।
Leave a comment