সিরিয়ার নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতায় অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার গঠনের অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করলেন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা। গতকাল (২৯ মার্চ) তিনি ২৩ সদস্যের নতুন মন্ত্রিসভার ঘোষণা দেন, যেখানে দেশটির বিভিন্ন জাতিগত ও ধর্মীয় সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হয়েছে।
গত বছরের ডিসেম্বরে দীর্ঘদিনের স্বৈরশাসক বাশার আল-আসাদের পতনের পর সিরিয়ায় রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করছিল। জানুয়ারি মাসে সংবিধান স্থগিত করে বিদ্রোহী নেতা আহমেদ আল-শারাকে প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকেই পশ্চিমা ও আরব বিশ্ব থেকে তাঁর ওপর চাপ আসছিল, যাতে তিনি সংখ্যালঘুদের অন্তর্ভুক্ত করে একটি ভারসাম্যপূর্ণ সরকার গঠন করেন।
সাম্প্রতিক সহিংসতা আরও দ্রুত এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে প্রভাব ফেলে। গত মাসে সিরিয়ার পূর্বাঞ্চলে উপকূলীয় শহরগুলোতে শত শত শিয়াপন্থী আলাউইত সম্প্রদায়ের মানুষকে হত্যা করা হয়, যা রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়িয়ে তোলে।
নতুন মন্ত্রিসভায় আলাউইত সম্প্রদায়ের ইয়ারুব বাদরকে পরিবহনমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যা এই গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্তির একটি স্পষ্ট ইঙ্গিত। কৃষি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন দ্রুজ সম্প্রদায়ের আমজাদ বদর। এছাড়া, বাশার আল-আসাদবিরোধী খ্রিষ্টান নেত্রী হিন্দ কাবাওয়াতকে সমাজকল্যাণ ও শ্রম মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, যা নারীর ক্ষমতায়নের প্রতীকী পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে।
অর্থমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন মোহাম্মেদ ইয়সর বারনিহ। প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কোনো পরিবর্তন আসেনি; আগের মতোই দায়িত্ব পালন করবেন মুরহাফ আবু কাসরা ও আসাদ আল-শিবানি। তারা উভয়েই বাশার পতনের পরপর গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সদস্য ছিলেন।
নতুন মন্ত্রিসভায় একটি ব্যতিক্রমী সংযোজন হলো ক্রীড়া ও জরুরি পরিষেবা মন্ত্রণালয়, যার দায়িত্ব পেয়েছেন রায়েদ আল-সালেহ। এটি সিরিয়ায় প্রথমবারের মতো গঠিত একটি মন্ত্রণালয়।
প্রেসিডেন্ট আল-শারা ইতিমধ্যে জানিয়েছেন, অন্তর্বর্তী এই সরকার আগামী পাঁচ বছর দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পালন করবে এবং দেশের প্রশাসনিক কাঠামো পুনর্গঠনের পাশাপাশি একটি স্থায়ী নির্বাচনের পথ তৈরি করবে। তবে নতুন সরকারে কোনো প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দেওয়া হয়নি, প্রেসিডেন্ট আল-শারা নিজেই নির্বাহী ক্ষমতা হাতে রেখেছেন।
Leave a comment