কুমিল্লার মনোহরপুর এলাকায় সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আয়েশা আক্তার রীমাকে শ্বাসরোধে হত্যার দায়ে তার স্বামী মো. জিয়াউদ্দিন নাসিরকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে তাকে ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) কুমিল্লার জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক, জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ সাইফুর রহমান এ রায় ঘোষণা করেন।
রায় ঘোষণার সময় দণ্ডপ্রাপ্ত নাসির আদালতে উপস্থিত ছিলেন। এ মামলায় অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় ভিকটিমের ভাসুর মো. মহিউদ্দিন মাসুম এবং জা শাহনাজ বেগমকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষ ও আদালত সূত্র জানিয়েছে, দীর্ঘ প্রায় ছয় বছরের বিচারপ্রক্রিয়া শেষে সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতেই এ রায় প্রদান করা হয়েছে, যা হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচারের পথ সুগম করেছে।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, ২০১৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর কুমিল্লা নগরীর মনোহরপুরের একটি বাড়িতে গৃহবধূ আয়েশা আক্তার রীমার মৃত্যু হয়। তখন তিনি সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ঘটনার পরপরই স্বামীর পরিবার দাবি করে, রীমা পারিবারিক কলহের কারণে আত্মহত্যা করেছেন। তবে এ দাবি প্রথম থেকেই সন্দেহজনক বলে মনে করে ভিকটিমের পরিবার।
রীমার বাবা মো. বাহার মিয়া পরদিনই কুমিল্লা কোতয়ালী মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় তিনি অভিযোগ করেন, পরিকল্পিতভাবে শ্বাসরোধ করে তার মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে। অভিযোগে স্বামী নাসির ছাড়াও ভাসুর মাসুম ও জা শাহনাজকে আসামি করা হয়। মামলার তদন্ত ও আদালতে উপস্থাপিত সাক্ষ্য–প্রমাণে উঠে আসে, রীমার মৃত্যুর সময় ঘরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন ছিল, যা আত্মহত্যার প্রাথমিক দাবির সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, তার মৃত্যু শ্বাসরোধে হয়েছে। এর পাশাপাশি পারিবারিক কলহ, গর্ভাবস্থায় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগও বিচারধারায় গুরুত্ব পায়।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইউসুফ আলী জানান, “আদালত অত্যন্ত সতর্কতা ও পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সব সাক্ষ্য–প্রমাণ বিশ্লেষণ করেছেন। স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাকে সর্বোচ্চ দণ্ড দেওয়া হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “ভিকটিমকে হত্যা করা হয়েছে কি না—এ বিষয়ে বিন্দুমাত্র সন্দেহ রাখেননি আদালত। রায়ের মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যা আমাদের সন্তুষ্ট করেছে।” রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, এই রায়ের মাধ্যমে একদিকে ভিকটিমের পরিবারের প্রতি ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হলো, অন্যদিকে ভবিষ্যতে এ ধরনের অপরাধ প্রতিরোধে এটি ভূমিকা রাখবে। আদালতের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, ব্যক্তিগত কলহ বা পারিবারিক বিবাদের কারণে গর্ভবতী নারীকে হত্যা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ।
Leave a comment